পরিবেশবান্ধব নীতিমালা অনুসরণ করতে বন্দর ও ওয়াসাকে নোটিশ দেবে পরিবেশ অধিদপ্তর ।। কর্ণফুলীর চর দখল করে গড়ে তোলা হচ্ছে আবাসিক এলাকা ও শিল্প-কারখানা



কর্ণফুলীকে রক্ষা করতে বন্দর কর্তৃপক্ষ ও চট্টগ্রাম ওয়াসাকে পরিবেশবান্ধব নীতিমালা অনুসরণ করে নদী ব্যবহারের জন্য নোটিশ প্রদান করবে পরিবেশ অধিদপ্তর। এদিকে, ভরাট হওয়া চর দখল করে আবাসিক এলাকা ও শিল্প-কারখানা গড়ে তোলা হচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তর ও বিশেষজ্ঞরা কর্ণফুলীর দূষণ ও ভরাট হওয়ার তিনটি কারণ চিহ্নিত করেছেন। তাঁরা বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের কারণে কর্ণফুলী নদীতে প্রতিবছর গড়ে দুই হাজার বিদেশী জাহাজ ঢোকে। প্রতিমাসে গড়ে দেড় হাজার ইনল্যান্ড জাহাজ কর্ণফুলীতে চলাচল করে। এসব জাহাজ ব্যাপকভাবে কর্ণফুলীকে দূষিত করছে। দেশী-বিদেশী জাহাজ মেরামতের সময় ধাতব পদার্থ যেমন জিংক, সীসা, ক্যাডমিয়াম পানিতে ফেলা, জাহাজে সঞ্চিত আবর্জনা ও বর্জ্য-তেল নিঃসরণ, বন্দরে ক্লিংকার, জিপসাম, সোডা-এ্যাশ খালাসকালে পানি ও বাতাসে ছড়িয়ে যাওয়া ইত্যাদি দূষণের কারণ। দ্বিতীয়ত, স্যুয়ারেজ প্লান্ট না থাকায় প্রতিদিন কর্ণফুলীতে ১ হাজার ৪৯ দশমিক ৩৫ মেট্রিক টন বর্জ্য মেট্রোপলিটন এলাকার ৫ খাল দিয়ে কর্ণফুলীতে পড়ছে। সে সমস্ত বর্জ্যের মধ্যে রয়েছে শিল্প, ট্যানারি, তেল শোধনাগার, সিমেন্ট কারখানা, জাহাজ নৌযান থেকে নিসৃত তেল, খোলা ল্যাট্রিনের মলমূত্র। মহানগরীতে কোন প্রকার আন্ডারসুয়্যারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট না থাকার কারণে ঐ সমস্ত দূষিত বর্জ্য সরাসরি কর্ণফুলীতে এসে পড়ছে। ঐ সমস্ত দূষিত বর্জ্য কর্ণফুলী নদীর পানি ব্যাপকভাবে দূষিত করার পাশাপাশি নদী ভরাট হয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করছে। তৃতীয়ত, বর্তমানে বৃহত্তর মহানগরীতে ব্যাপক হারে পাহাড় কাটা এবং গাছপালা কেটে ফেলার কারণে প্রতিবছর লক্ষাধিক টন পলিমাটি বর্ষাকালীন ঢলে কর্ণফুলীতে গিয়ে পড়ছে। সূত্রমতে-গত আট বছরে কর্ণফুলীতে পলি জমা হওয়ার পরিমাণ তিনগুণের অধিক বেড়ে গেছে। এছাড়াও কর্ণফুলীর শাখা -হালদা নদী, শিকলবাহা খাল, চানখালিখাল, শিলক খাল, ইছামতি খাল, গশ্চি খালসহ আটটি শাখা প্রশাখা দিয়ে বর্ষা মৌসুমসহ সারা বছর লক্ষাধিক টন পলি এসে কর্ণফুলী নদীর মোহনায় জমা হচ্ছে। যে কারণে বর্তমানে কর্ণফুলীর মোহনা এলাকা শাহ আমানত সেতুর উপরে নীচে, বাংলা বাজার, শিকলবাহা, সদরঘাট, ফিরিঙ্গী বাজার ব্রীজ ঘাটা ও বাকলিয়া এলাকায় ধুধু চর জেগে উঠেছে। চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক আবদুস সোবহান বলেন, কর্ণফুলীকে রক্ষা করতে সম্মিলিত প্রচেষ্টা এখন সময়ের দাবি। বন্দর কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম ওয়াসা, সিটি কর্পোরেশন, শিল্প কারখানা মালিক, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও পরিবেশ অধিদপ্তর একযোগে কাজ করলে কর্ণফুলী দূষণমুক্ত হবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন