রোববার বিকেল পর্যন্ত মুলতবি বাজেট অধিবেশন শুরু বিরোধী দলের বয়কট

বিরোধী দলের অনুপস্তিতিতে নবম জাতীয় সংসদের দ্বিতীয় অর্থাৎ বাজেট অধিবেশন শুরু হয়েছে। আসন নিয়ে সমঝোতা না হওয়ায় গতকাল বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া সংসদ অধিবেশনে যোগ দেয়নি বিরোধী দল। চলতি সংসদের নির্বাচিত সংসদ সদস্য মমতাজ ইকবালের মৃত্যুতে রেওয়াজ অনুযায়ী শোক প্রস্তাব গ্রহণের পর মাত্র ৩৫ মিনিটের মধ্যেই সংসদ অধিবেশন আগামী রোববার ৭ জুন বিকাল ৪টা পর্যন্ত মুলতবি করা হয়। খবর এনএনবির। বিকাল ৩টা ২৫ মিনিটে স্পিকার এডভোকেট আবদুল হামিদের সভাপতিত্বে দ্বিতীয় অধিবেশন শুরু হয়। উদ্বোধনী ভাষণে স্পিকার সংসদকে কার্যকর করতে সরকার ও বিরোধী দল ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এরপর সদ্য প্রয়াত সংসদ সদস্য মমতাজ ইকবাল, বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনার স্বামী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া, ভারতের রাষ্ট্রপতি শ্রী আর ভেঙ্কটারমনসহ মোট ১৬ জন নানা শ্রেণী-পেশার ব্যক্তিত্ব এবং ঘূর্ণিঝড় আইলার তাণ্ডবে নিহতদের স্মরণে আনা শোক প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। শোক প্রস্তাব গ্রহণের আগে নিহতদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে ১ মিনিট নীরবতা পালন শেষে মোনাজাত করা হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য বজলুল হক হারুন। শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নেন আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, শেখ ফজলুল করিম সেলিম ও জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার। তারা প্রয়াত নেতাদের দীর্ঘ কর্মময় জীবনের ওপর আলোকপাত ছাড়াও শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। পরে সংসদ সদস্য মমতাজ ইকবালের সম্মানে সংসদের অধিবেশন আগামী ৭ জুন বিকেল ৪টা পর্যন্ত মুলতবি করা হয়। শোক প্রস্তাবের আগে স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের অনুপসি'তিতে সংসদ পরিচালনার জন্য ৫ সদস্যের সভাপতিমণ্ডলীর প্যানেল নির্বাচন করেন স্পিকার এডভোকেট আবদুল হামিদ। সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যরা হলেনণ্ড সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু, সাবেক প্রতিমন্ত্রী এইচ এন আশিকুর রহমান, জাতীয় পার্টির এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, বিএনপির এ কে এম হাফিজুর রহমান ও আওয়ামী লীগের সাবেক প্রতিমন্ত্রী জিনাতুন্নেছা তালুকদার। সংসদ কক্ষে আসন পুনর্বন্টন বিরোধী দল মেনে না নিলেও স্পিকার এডভোকেট আবদুল হামিদ তার ক্ষমতাবলে কয়েকটি আসন পুনর্বন্টন করেছেন। বিএনপির প্রধান খালেদা জিয়ার আসনের পাশে চারটি আসন রাখা হয়েছে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, এম কে আনোয়ার, উপনির্বাচনে বিজয়ী সাবেক স্পিকার ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের জন্য। প্রধানমন্ত্রীর পাশের আসনটি পেয়েছেন সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। সামনের প্রথম ট্রেজারি বেঞ্চের শেষ আসনটি জাপার চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের ছিল। ওই আসনটি এখন পেয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা দেওয়ান ফরিদ গাজী। সামনের সারির দ্বিতীয় অংশের প্রথম দুটি আসন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে এইচ এম এরশাদ এবং তার স্ত্রী জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম রওশন এরশাদকে। এজন্য অবশ্য জাপার অপর প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বিমানমন্ত্রী জি এম কাদেরকে সামনের সারি থেকে দ্বিতীয় সারিতে যেতে হয়েছে। উদ্বোধনী ভাষণে স্পিকার এডভোকেট আবদুল হামিদ বলেন, ২৯ ডিসেম্বর অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এ সংসদে এটাই প্রথম বাজেট। সরকারের নির্বাচনী ওয়াদা পূরণে বাজেট একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। আর জাতীয় জীবনে বাজেট একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল। আগামী এক বছরে সরকার জনকল্যাণে যেসব কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবে তারই রূপরেখা থাকবে এ বাজেটে। স্পিকার বলেন, সংসদীয় গণতন্ত্রে সংসদই হচ্ছে সকল কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু। সংসদকে কার্যকর করতে হলে সরকারি ও বিরোধী দলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, জনগণ তাদের ভাগ্যোন্নয়নের লক্ষ্যে তাদের পছন্দমত প্রতিনিধিকে সংসদে পাঠিয়েছেন। তাই সংসদ সদস্যদের দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে সে লক্ষ্যে কাজ করা। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, সরকারি ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের গঠনমূলক দিকনির্দেশনা বাজেটকে বাস্তবমুখী, উন্নয়নবান্ধব এবং দলমত নির্বিশেষে সকলের ভাগ্যোন্নয়নের দলিলে পরিণত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তিনি সংসদ সদস্যদের কাজের সুবিধার জন্য সংসদ ভবনে অফিস রুম, নির্বাচনী এলাকায় কার্যালয়, সংসদ থেকে গাড়ির ব্যবস'া করার ঘোষণা দেন। এ সময় টেবিল চাপড়িয়ে সংসদ সদস্যরা স্পিকারের এমন ঘোষণাকে অভিনন্দিত করেন।
সংসদে বিরোধী দলের ব্রিফিং

সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশনের প্রথম দিন যোগ না দেয়ার কারণ ব্যাখ্যা করেন বিরোধী দলের চিফ হুইপ জয়নাল আবেদীন ফারুক। সংসদ ভবনের মিডিয়া সেলে আয়োজিত ব্রিফিংকালে তিনি বলেন, স্পিকার আমাদের আসন বন্টনের ব্যাপারে সম্মানজনক সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু এ বিষয়ে স্পিকার যে প্রস্তাব দিয়েছেন তা মোটেও সম্মানজনক নয়। তাই আজ (বৃহস্পতিবার) আমরা সংসদ অধিবেশনে যাচ্ছি না। আগামী সপ্তাহে সংসদীয় দলের বৈঠকে এ বিষয়ে পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন বলেন, স্পিকার আসন বন্টন নিয়ে তার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করে এর সম্মানজনক সমাধান করবেন। কেননা আমরা সংসদকে কার্যকর করতে চাই, গঠনমূলক ভূমিকা রাখতে চাই।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন