কোন উপলক্ষ নেই, তবুও বেড়েছে মরিচ মসলা ও হলুদের দাম



সাধারণত ঈদ বা কোন পালাপার্বণের আগে মসলার দাম বাড়ার রেওয়াজ ছিল। কিন্তু বছরের এ সময়টাতে কোন কারণ ছাড়াই বিভিন্ন ধরনের মসলার দাম বেড়ে গেছে কেজিপ্রতি দশ থেকে দেড় শ টাকা পর্যন্ত। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে হলুদের দাম। পাইকারি বাজারে দেশি হলুদের দাম কেজিপ্রতি বেড়েছে ৩০ টাকা। এলাচির দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি দেড় শ টাকা। আদা-রসুন, ধনিয়া, মরিচসহ অন্যান্য মসলার দামদরেরও একই অবস্থা। ব্যবসায়ীরা জানান, আমদানি-মূল্য বেড়ে যাওয়ায় মসলার দাম বেড়ে যাচ্ছে। ভারত ও চীনে বুকিংরেট বেড়েছে, তাই দেশীয় বাজারে এর প্রভাব পড়ছে। এ ছাড়া প্যাকেটজাত মসলা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের দৌরাত্ম্যে হঠাৎ মসলার দাম বেড়েছে। মসলা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বছরের এ সময়টাতে একযোগে মসলা সংগ্রহের কাজে নামে। তাই বাজারে বাড়তি চাপ পড়ায় মসলার দাম বেড়েছে বলে মন্তব্য করেন ব্যবসায়ীরা। এ প্রসঙ্গে পাহাড়তলী রেলওয়ে বাজারের ব্যবসায়ী মো. মোজাহের আলম দৈনিক আজাদীকে বলেন, রাঙ্গামাটিতে হলুদের বাম্পার ফলন হয়। সেখানে খোঁজ নিয়ে জেনেছি, মসলা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সেখান থেকে হলুদ সংগ্রহ করছে। এবার হলুদ সংগ্রহের মাত্রা বেশি হওয়ায় দাম বাড়ছে হলুদের। পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এলাচি বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১১শ টাকা করে। খুচরা বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ১২শ টাকা পর্যন্ত। পাইকারি বাজারে ১৫/১৬ দিন আগেও এলাচি বিক্রি হয়েছে সাড়ে ৯শ থেকে এক হাজার টাকা দরে। দেশি হলুদের পাইকারি দর দু সপ্তাহ ধরে চড়া। দেশি হলুদ ৬০ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯০ টাকায়। ভারতীয় হলুদ ৮০ টাকা থেকে বেড়ে গতকাল ১০৫ টাকা দরে বিক্রি হয়। খুচরা বাজারে ১১৫ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরের নিচে কোন হলুদ নেই। বেড়েছে মরিচের দামও। নাজিরহাট বা হাটহাজারীর মরিচের কদর যেমনি বেশি তেমনি নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যটির দামও বেড়েছে বেশ। আগে যেখানে খুচরা বাজারে ১২০ টাকা দিয়ে হাটহাজারীর এক কেজি মরিচ পাওয়া যেত এখন সেক্ষেত্রে লাগছে ১৬০ টাকা। এ ছাড়া রায়পুর বা লক্ষ্মীপুরের মরিচের দামও কেজিপ্রতি ৮-১০ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯০ থেকে ৯৫ টাকা দরে। পাইকারি বাজারের পাশাপাশি খুচরা বাজারেও আদা, রসুন ও ধনিয়ার দাম বেড়েছে। পাইকারি বাজারে ৩০-৩২ টাকা দরের চায়নিজ আদা এখন বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৪৮ টাকা দরে। খুচরা বাজারে তা গিয়ে ঠেকছে ৬০ টাকায়। ৪৫ টাকা দরের ফরিদপুরী ধনিয়ার দর কেজিপ্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়ে গেছে। খুচরা বাজারে ধনিয়া এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা দরে। রসুনের দাম পাইকারি বাজারে মাত্র ১৩ টাকায় নেমে এসেছিল। সেই রসুনের দাম বেড়ে এখন দাঁড়িয়েছে ২৮ থেকে ৩০ টাকায়। খুচরা বাজারে রসুন বিক্রি হচ্ছে ৩২ থেকে ৩৬ টাকা দরে। কোন উপলক্ষ ছাড়া হঠাৎ করে মসলার দাম বাড়ায় ক্রেতারা ক্ষুব্ধ। এ প্রসঙ্গে একটি বেসরকারি কলেজের শিক্ষক সাইফুল ইসলাম ভূঁইয়া দিপু বলেন, কোন পণ্যের দাম যদি কোন কারণ ছাড়া হঠাৎ করে কেজিপ্রতি ৪০/৫০ টাকা বেড়ে যায় তাহলে সাধারণ মানুষের ভোগান্তিও যে বাড়ে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এ ব্যাপারে তিনি সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। মসলাজাত পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি প্রসঙ্গে খাতুনগঞ্জের মেসার্স জনতা ট্রেডার্সের মালিক হাজি মুহাম্মদ মুসা বলেন, আগে বুকিংরেট কম থাকার পাশাপাশি আমদানি বেশি ছিল, তাই রসুনের দাম কমে গিয়েছিল। কিন' সম্প্রতি ভারত ও চীনে আদা এবং রসুনের বুকিংরেট বেড়ে যাওয়ায় এ দুটি পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। এদিকে বাজারে মসলাজাত পণ্যের মধ্যে জিরা ও পেঁয়াজের দাম বাড়ে নি। গতকাল পাইকারি ও খুচরা বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ ১৪ থেকে ১৫ টাকা এবং সিরিয়া-আফগানিস্তানের জিরা ২৪০-২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন