কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ে অপারেটর নিয়োগে আবারো অনিশ্চয়তা ।। দ্বিতীয় দফা টেন্ডারের কার্যক্রম ১ মাসের জন্য স্থগিত নির্দেশনা চেয়ে মন্ত্রণালয়ে বন্দর চেয়ারম্যা

চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেনার হ্যান্ডলিং কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অপারেটর নিয়োগের লক্ষ্যে দ্বিতীয় দফা আহূত টেন্ডারের কার্যক্রমও ঝুলে পড়ছে। এতে করে আগামী ১৫ জুন থেকে এছাক ব্রাদার্স নামের প্রতিষ্ঠান কন্টেনার হ্যান্ডলিং করার কথা থাকলেও শেষতক তা কোথায় গিয়ে ঠেকছে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স'ায়ী কমিটি দ্বিতীয় টেন্ডারের কার্যক্রম এক মাসের জন্য স'গিত রাখার নির্দেশ দিয়েছে। এই নির্দেশের প্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কি করবেন সেই নির্দেশনা চেয়ে মন্ত্রণালয়ের সচিবের নিকট পত্র পাঠিয়েছেন। সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে বছরে বর্তমানে দশ লাখ টিইইউএস-এর চেয়ে বেশি কন্টেনার হ্যান্ডলিং হচ্ছে। বছরে দশ লাখ টিইইউএস কন্টেনার হ্যান্ডলিংকারী মিলনিয়ার পোর্টের তালিকায় চট্টগ্রাম বন্দরের অন্তর্ভুক্তিকে বেশ সম্মানজনক বলেও বন্দর কর্তৃপক্ষ মনে করছে। কিন' সেই কন্টেনার হ্যান্ডলিং নিয়ে বন্দরে নানা তেলেসমাতি কারবার শুরু হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরে গত প্রায় চার বছর ধরে কন্টেনার হ্যান্ডলিং করছে সাইফ পাওয়ারটেক নামের বেসরকারি একটি কোম্পানি। ২০০৪ সালে বন্দরে গ্যান্ট্রিক্রেন চালু করার সময় থেকে সাইফ পাওয়ারটেক বন্দরে কাজ করছে। পরবর্তীতে তারা গ্যান্ট্রিক্রেন অপারেশন থেকে শুরু করে কন্টেনার হ্যান্ডলিং কার্যক্রমের পুরোটা পরিচালনা করতে থাকে। ২০০৮ সালে প্রতিযোগিতামূলক টেন্ডারের মাধ্যমে অপারেটর নিয়োগের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ টেন্ডার আহ্বান করে। সেই টেন্ডার নিয়ে অভিযোগ উঠলে মন্ত্রণালয় থেকে টেন্ডার বাতিল করে দেয়া হয়। ২০০৮ সালের শেষদিকে এসে দ্বিতীয় দফায় টেন্ডার আহ্বান করা হয়। এতে এছাক ব্রাদার্স সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে কাজ পায়। কিন' এই টেন্ডার প্রক্রিয়া নিয়েও ইতোমধ্যে অভিযোগ উঠেছে। চট্টগ্রাম বন্দরের কোটি কোটি টাকার এই টেন্ডার হ্যান্ডলিং কার্যক্রমের অপারেটর নিয়োগের জন্য গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে নানা প্রক্রিয়া চললেও শেষতক কোনকিছু চূড়ান্ত করা যাচ্ছে না। দ্বিতীয় দফা টেন্ডারের প্রেক্ষিতে এছাক ব্রাদার্স আগামী ১৫ জুন থেকে বন্দরে কার্যক্রম শুরু করার কথা ছিল। ইতোমধ্যে সাইফ পাওয়ারটেকের সাথে বন্দর কর্তৃপক্ষের লেনদেনও সুরাহা হয়েছে। কিন' শেষ মুহূর্তে এসে আবারো সংকট সৃষ্টি হয়েছে। নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স'ায়ী কমিটি এই টেন্ডার প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন ধরনের অনিয়মের অভিযোগ পেয়েছে। এসব অভিযোগ খতিয়ে দেখার জন্য নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি একটি সাব কমিটিও গঠন করেছে। সংসদীয় কমিটি সম্প্রতি বৈঠক করে পুরো বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত অনুসন্ধান এবং কোন অনিয়ম পেলে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে প্রথম টেন্ডার নিয়ে আলোচনা হয়। তাতে এভারেস্ট শিপিং নামের প্রতিষ্ঠান সর্বনিম্ন দরদাতা হলেও তাদের কাজ না দেয়ার কারণ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এবং উক্ত টেন্ডারের পর এভারেস্টকে কাজ না দেয়ায় সরকারের কত টাকার ক্ষতি হয়েছে তারও হিসাব নিকাশ করা হচ্ছে। এই ক্ষতির সাথে কারা জড়িত এবং পরবর্তী টেন্ডারে এছাক ব্রাদার্স নামের প্রতিষ্ঠান যে অভিজ্ঞতা সনদ দিয়েছে তা সঠিক কিনা এছাড়া এই টেন্ডারে অন্য কোন অনিয়ম হয়েছে কিনা সেই সব খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংসদীয় কমিটি। আর পুরো বিষয়টি তদন্ত করার জন্য চার সদস্যের যে সাব কমিটি করা হয়েছে তাদেরকে এক মাসের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। একই সাথে এছাক ব্রাদার্সের নিয়োগ স'গিত রেখে উক্ত এক মাস আগের নিয়মেই কন্টেনার হ্যান্ডলিং কার্যক্রম পরিচালনা করানোরও সিদ্ধান্ত হয়েছে। নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স'ায়ী কমিটি এই ব্যাপারে নৌ পরিবহন সচিব এবং বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ারও নির্দেশ দিয়েছে। এদিকে এই নির্দেশের প্রেক্ষিতে বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান পরবর্তী করণীয়ের ব্যাপারে নির্দেশনা চেয়ে গতকাল নৌ পরিবহন সচিবের নিকট জরুরি পত্র পাঠিয়েছেন। নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা পাওয়ার পর বন্দর কর্তৃপক্ষ পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন বলেও সংশ্লিষ্ট একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানিয়েছেন। তবে অপর একটি সূত্র জানিয়েছে , নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স'ায়ী কমিটির একজন সদস্য হচ্ছেন খোদ নৌ পরিবহন মন্ত্রী। এতে করে উক্ত কমিটি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাতে মন্ত্রীরও সম্মতি রয়েছে। এক্ষেত্রে নতুন করে সচিব কোন নির্দেশনা দেবেন না বা দিতে পারেন না। আর এর মাধ্যমেই আবারো ঝুলে যাচ্ছে বন্দরের কন্টেনার হ্যান্ডলিং এর অপারেটর নিয়োগ প্রক্রিয়া। অবশ্য বন্দর কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা বলেছেন, ঠিকাদার নিয়োগ না হলে বন্দর কর্তৃপক্ষ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কন্টেনার হ্যান্ডলিং কার্যক্রমেও কোন সমস্যা হবে না।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন