অতিঝুঁকিপূর্ণ বসতিতে দু’হাজার পরিবার ।। না সরালে এ বর্ষায়ও জানমালের ব্যাপক ক্ষতির আশংকা



পরপর দুবছর বর্ষাকালে চট্টগ্রাম মহানগরীতে পাহাড় ধসে প্রাণহানির ঘটনা ঘটলেও নগরীর প্রায় ৩০টি পাহাড়ের চূড়া, ঢাল, পাদদেশ এবং আশপাশের এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ বসতি রয়েছে। সম্প্রতি চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদপ্তর জরিপ চালিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এসব বসতি চিহ্নিত করে। পরিবেশ অধিদপ্তর এসব বসতি সরিয়ে নেওয়ারও সুপারিশ করেছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের জরিপ অনুযায়ী, নগরীর অতি ঝুঁকিপুর্ণ বসতিতে বাস করছে প্রায় দুই হাজার পরিবার। আর কম ঝুঁকিপূর্ণ বসতিতে আছে চার থেকে পাঁচ হাজার পরিবার।
এসব বসতি অবৈধভাবে স্থাপন করা হয়েছে জানিয়ে অধিদপ্তরের পরিচালক আবদুস সোবহান বলেন, “বসতি স'াপনকারীদের সরানো না গেলে জানমালের ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে।” তিনি দাবি করেন, “ছিন্নমূলদের সামনে রেখে কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি পাহাড়ে বসতি গড়েছে।” চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. শহীদুল ইসলাম বলেন, “ঝুঁকিপূর্ণ স'ান থেকে বসতি সরিয়ে নেওয়া না হলে এবারও বর্ষায় বড় ধরনের বিপর্যয় হতে পারে।”
তিনি বলেন, “অতি ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়গুলো থেকে শুধু বসতি সরানো নয়, পাহাড় সুরক্ষারও উদ্যোগ নিতে হবে।” পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, নগরীতে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত ৩০টি পাহাড়ের মধ্যে নয়টি পাহাড়ই ওয়াসা, রেলওয়ে, সিটি করপোরেশন, পুলিশ ও মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের। খবর বিডিনিউজের।
অধিদপ্তরের জরিপ অনুযায়ী বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হল- নগরীর কুসুমবাগ এলাকায় পুলিশ লাইন, গরীবুল্লাহ শাহ হাউজিং সোসাইটি সংলগ্ন পাহাড়, ওয়াসা নিয়ন্ত্রণাধীন মধ্য মতিঝর্ণা পাহাড় ও সংলগ্ন এলাকা, ইস্পাহানি টেক্সটাইল মিল সংলগ্ন গোল পাহাড়, উত্তর পাহাড়তলীর লেকভিউ আবাসিক এলাকা সংলগ্ন পাহাড়, বায়েজীদ এলাকার ট্যাংকির পাহাড়, সিরাজ শাহ কলোনি ও আমিন টেক্সটাইল, মেডিকেল কলেজের স্টাফ কোয়ার্টার সংলগ্ন পাহাড়ের পাদদেশ ও ঢালের বসতি।
কম ঝুঁকিপূর্ণের তালিকায় আছে- বিশ্ব কলোনি, উত্তর কাট্টলী নন্দন হাউজিং, খুলশী ব্রিক ফিল্ড, দক্ষিণ খুলশী জাকির হোসেন সোসাইটি, দক্ষিণ খুলশী আবাসিক এলাকাসহ একই এলাকার আরেকটি পাহাড়, এসবি নগর, খুলশী ভ্যালি আবাসিক এলাকা, সূচনা ভিআইপি আবাসিক এলাকা, ডলফিন, কিং অব চিটাগাং কমিউনিটি সেন্টার সংলগ্ন পাহাড় ও সামারা হিলের পাদদেশসহ আশপাশের বসতি।
২০০৭ সালের ১১ জুন নগরীর লালখান বাজারে মতিঝর্ণা এলাকায় ওয়াসার টাঙ্কির পাহাড়, কুসুমবাগ এলাকা মহানগর পুলিশের নিয়ন্ত্রণাধীন পাহাড়, সেনানিবাস সংলগ্ন কাইচ্যাঘোনা, লেবু বাগানসহ বিভিন্ন এলাকায় পাহাড় ধসে ১২৮ জনের প্রাণহানি ঘটে। এ ঘটনায় বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত ও বিশেষজ্ঞ কমিটি পাহাড় কাটা বন্ধ ও সংশ্লিষ্ট এলাকায় বসতি স্থাপন নিয়ে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ করলেও এখন পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়নি। এসব সুপারিশে নির্বিচারে পাহাড় কাটার সঙ্গে জড়িত প্রভাবশালী ব্যক্তি, সংস'া ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ের পাদদেশ ও ঢাল থেকে বসতি সরিয়ে নিতে বলা হয়।
গত বর্ষা মৌসুমে বিভিন্ন পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বাস করা পরিবারগুলোকে সরিয়ে নিতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসন উদ্যোগ নিলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। স্থানীয় প্রভাবশালীদের সহায়তায় ছিন্নমূলরা সেসব স্থানে বসতি গড়ে তোলে। ২০০৮ সালের ১৮ আগস্ট আবারও টাঙ্কির পাহাড় ধসে ১১ জনের মৃত্যু হয়।
বিভাগীয় কমিশনার এম এন সিদ্দিক বলেন, “অনেক স্থান থেকে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।” তবে কয়েকটি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় অনেক বসতি স্থাপনের বিষয়টি তিনি শুনেছেন বলে জানান। ঝুঁকিপূর্ণ বসতি চিহ্নিত করা এবং পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক আবদুস সোবহান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ইতোমধ্যে ফয়’স লেক সংলগ্ন উত্তর খুলশী এলাকার পাহাড় থেকে অবৈধ বসতি সরিয়ে নিতে রেলওয়েকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই অন্য পাহাড়গুলো থেকে বসতি সরিয়ে নিতে নোটিশ দেওয়া হবে।”
পাহাড় কাটা আইন দুর্বল হওয়ায় কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া যাচ্ছে না দাবি করে তিনি বলেন, “নোটিশ দেওয়ার পর এসব স্থান থেকে বসতি সরানো না হলে প্রশাসনের সহায়তা নিয়ে উচ্ছেদ করা হবে।” এ বিষয়ে পরিবেশ আন্দোলনের কর্মী শরীফ চৌহান বলেন, “প্রশাসনের যথাযথ উদ্যোগের অভাব এবং স্থানীয় প্রভাবশালীদের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসতি উচ্ছেদ করা সম্ভব হচ্ছে না।” পাহাড় কাটা আইন সংশোধনসহ এর কঠোর প্রয়োগের জন্য প্রশাসনের প্রতি আহবান জানান তিনি।

আজ সংসদে বাজেট পেশ ।। পাঁচটি খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে

আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারকে মাথায় রেখে বিদ্যমান আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক সঙ্কট বিবেচনায় পাঁচটি বিষয়ে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে বাজেট তৈরি করেছেন অর্থমন্ত্রী। আজ বৃহস্পতিবার বিকালে জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত নয়া বাজেট পেশ করবেন। এরপর বাজেটের ওপর আলোচনা করে আগামী ৩০ জুন তা সংসদে পাস করা হবে। ২০০৯-১০ অর্থ বছরের বাজেটের আকার হতে পারে ১ লাখ ১৩ হাজার ৮১৪ কোটি টাকা।
অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত খাতগুলোর মধ্যে প্রথমেই রয়েছে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি প্রতিরোধ এবং বিশ্বমন্দা মোকাবেলায় সার্বিক অর্থনৈতিক সি'তিশীলতা নিশ্চিতকরণ। যে পাঁচটি খাতে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে সেগুলো হলোণ্ড বিদ্যুৎ, কৃষি, শিক্ষা, সামাজিক সুরক্ষা এবং যোগাযোগ। ইশতেহারে দেয়া নানা প্রতিশ্রুতির আলোকেই কিছু পরিবর্তন আনা হচ্ছে। কিছু প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হবে এ অর্থবছরে যার বেশির ভাগই হবে ধাপে ধাপে। এসব কারণে এ বাজেটে বড় আকারের থোক বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্য বাজেটের আকারও বড় হচ্ছে এবং এ কারণে ঘাটতি বাজেটও বড় হচ্ছে। খবর এনএনবির।
জানা যায়, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে বলা হয়েছিল, দ্রব্যমূল্যের দুঃসহ চাপ প্রশমনের লক্ষ্যে চাল-ডাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কমিয়ে জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে সি'তিশীল রাখার ব্যবস'া করা হবে। দেশজ উৎপাদন বৃদ্ধিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে সময়মতো আমদানির সুবন্দোবস্ত, বাজার পর্যবেক্ষণসহ বহুমুখী ব্যবস'া গ্রহণ করা হবে। মজুদদারি ও মুনাফাখোরি সিন্ডিকেট ভেঙে দেয়া হবে, চাঁদাবাজি বন্ধ করা হবে। ভোক্তাদের স্বার্থে ভোগ্যপণ্য মূল্য নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ গড়ে তোলা হবে। সর্বোপরি সরবরাহ ও চাহিদার ভারসাম্য সৃষ্টি করে দ্রব্যমূল্য কমানো হবে ও সি'তিশীলতা প্রতিষ্ঠা করা হবে। ইশতেহারের এ নীতি মেনেই বাজেটে নিত্যপণ্যের শুল্কহারে পরিবর্তন আনা হচ্ছে।
আসছে বাজেটে দাম বাড়বে যেসব পণ্য সেগুলো হলোণ্ড নিউজপ্রিন্ট, এয়ারকন্ডিশন, রেফ্রিজারেটর, ফ্রিজ, সেলুলার ফোন, গাড়ি, মোটরসাইকেল, চশমার ফ্রেম, মশার কয়েল, বিস্কুট, গ্লুকোজ, ইমিটেশন জুয়েলারি, স্যুটকেস, ভ্যানিটি ব্যাগ, ব্রিফকেস, স্কুল ব্যাগ, টুথব্রাশ, গৃহস্থালি, কিচেন ও বাথরুম উপকরণ, সব ধরনের টাইলস, ড্রাইসেল ব্যাটারিসহ ১৫২টি পণ্য।
নতুন এ বাজেটে দাম কমার তালিকায় রয়েছে এমন পণ্যের মধ্যে রয়েছেণ্ড শিল্পের কাঁচামাল, ওষুধের কাঁচামাল, রাবার ও প্লাস্টিক, শিক্ষাবিষয়ক বই, ফ্লোরোসেন্ট এনার্জি সেভিং বাল্ব ও যন্ত্রাংশ, ফটোভোল্টিক সেল, ৩০০০ ডিডব্লিউটি ক্ষমতার সাগরে চলাচলের জাহাজ, খাদ্য তৈরির উপকরণ, অর্থোপেডিক চিকিৎসার ওষুধ, পাল্প, ফসফরিক এসিড, হাইব্রিড মোটরকার ইত্যাদি।
সূত্র জানায়, আসছে বাজেটে ১২ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে শূন্য আমদানি শুল্ক করা হচ্ছে। এর মধ্যে চাল-ডাল, আটা, পিঁয়াজ-রসুন, তাজা মাছ ও তাজা সবজি ইত্যাদি রয়েছে। এ ছাড়া ভোজ্যতেল, মাশরুম ও পামতেলসহ ৮ পণ্যে শুল্ক কমানো হচ্ছে। ভোজ্যতেলের দাম কমাতে আমদানি শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে ১২ শতাংশে নামিয়ে আনা হচ্ছে। এ ছাড়া ভোজ্যতেল আমদানিতে ল্যান্ডিং চার্জ আড়াই শতাংশে নামিয়ে আনা হচ্ছে। ভোজ্যতেল আমদানিতে ব্যবসায়ীদের শতকরা ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট দিতে হয়। এর সঙ্গে ক্লিয়ারিং চার্জ, ইন্স্যুরেন্স এবং এলসি কমিশন মিলে আরো প্রায় ৫ শতাংশ ব্যয় হয়। সব মিলিয়ে শতকরা ২০ ভাগ অতিরিক্ত খরচ যোগ হয় এলসি মূল্যের সঙ্গে। নয়া বাজেটে এ দুটি খাতে প্রায় ৫ শতাংশ শুল্ক কমানো হচ্ছে। ভোজ্যতেলের পাশাপাশি পামওয়েলের ক্ষেত্রেও একই হারে শুল্ক নির্ধারণ করা হচ্ছে। এছাড়া সব ধরনের পাখি, মানবদেহের ভ্যাকসিন, গবাদিপশুর খাদ্য, মাশরুম গাছের চারা, মাছের পোনার আমদানি শুল্ক কমানো হচ্ছে।
নিত্যপণ্য ছাড়াও সরকার নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে তথ্যপ্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট যন্ত্রাংশের আমদানি শুল্ক ৩ শতাংশ কমানো হচ্ছে। এসব পণ্যে আমদানি শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে ১২ শতাংশে নামিয়ে আনা হচ্ছে।
কৃষি উৎপাদন বাড়াতে কৃষি উপকরণ যেমন ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার, ধান মাড়াইকলসহ বিভিন্ন ধরনের উৎপাদন সংশ্লিষ্ট পণ্যে আমদানি শুল্ক ৩ শতাংশ কমানো হচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে কাস্টম ডিউটি সম্পূরক শুল্ক অব্যাহত রেখে ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে ১২ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রস্তাব করা হয়েছে। উচ্চফলনশীল ধান উৎপাদনে কৃষকদের প্রণোদনা দিতে ধানবীজ আমদানি শুল্ক কমানো হয়েছে।
বাজেটে সংবাদপত্র শিল্পে প্রণোদনা দিতে শূন্য শুল্ক অব্যাহত রাখা হচ্ছে। সংবাদপত্র শিল্প মালিকরা প্রাক-বাজেট আলোচনায় অর্থমন্ত্রীকে এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেয়। ওই প্রস্তাবনা অনুযায়ী নয়া বাজেটেও নিউজপ্রিন্ট আমদানিতে শূন্য শুল্ক অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে শুল্ক কমানোর পাশাপাশি বিলাসী ও স্বাস্থ্যহানিকর পণ্যে শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে নয়া বাজেটে। আসছে বাজেটে কমবেশি ৭৮ বিলাসী পণ্যে ৩ থেকে ৫ শতাংশ শুল্কহার বাড়ছে। বিলাসী পণ্যগুলোর মধ্যে কিছু পণ্যের আমদানি শুল্ক বাড়ছে, আবার কিছু পণ্যে কাস্টম ডিউটি ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাবনা থাকছে। যেসব পণ্যের শুল্ক বাড়ছে তার মধ্যে টিভি, ফ্রিজ, এয়ারকুলার, গাড়ি, মোবাইল সেট, টেলিফোন সেট, ল্যাম্প হোল্ডার, সব ধরনের কসমেটিকস, হেড ফোন, লাউড স্পিকার, ওয়াকিটকি, অটো জানালা, অটো দরজা, থাই গ্লাস, হেয়ার মেশিন, ঢেউটিন, ট্রান্সফরমার, পার্ট রেজার, স্যানিটারি দ্রব্য, ডায়মন্ড, স্বর্ণের কয়েন, কার্পেট, টাইলস, ফ্যাং টিস্যু, টয়লেট টিস্যু, আর্ট কার্ড, ফ্লোটিং পেপার, মশার কয়েল, সেভিং দ্রব্য, সিডি-ভিসিডি, লেজার ফিল্ম, রঙ, উন্নতমানের জুতা, স্যুট, পোশাক, মাখন, রাবার, ম্যাচ, সব ধরনের আটাজাতীয় দ্রব্য, উন্নত মানের ফাস্টফুড, মিল্ক এবং ক্রিম।
এছাড়া স্বাস্থ্যহানিকর পণ্যের মধ্যে তামাক ও তামাক জাতীয় পণ্যসহ সব ধরনের মদের আমদানি শুল্ক বাড়ানো হচ্ছে। এর মধ্যে কিছু পণ্যের আমদানি শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৮ শতাংশ আবার কিছু পণ্যের আমদানি শুল্ক একই রেখে কাস্টম ডিউটি, সম্পূরক শুল্কসহ অন্যান্য চার্জ ৩ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
এদিকে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার পরিপ্রেক্ষিতে দেশীয় শিল্পে প্রণোদনা দিতে দেশে উৎপাদিত বিলাসী পণ্যের শুল্ক কমানো হচ্ছে। দেশে উৎপাদিত টিভি, ফ্রিজ, মোটরগাড়ির যন্ত্রাংশ ও জেনারেটরসহ বিলাসী পণ্যের শুল্ক কমানোর প্রস্তাবনা থাকবে নয়া বাজেটে।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, আগামী বছরের জন্য মোট রাজস্ব প্রাপ্তি ধরা হয়েছে ৭৯ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) খাতে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬১ হাজার কোটি টাকা। এনবিআর বহির্ভূত খাতে রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৯৫৫ কোটি টাকা এবং কর ব্যতিত প্রাপ্তি ধরা হয়েছে ১৫ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা। বৈদেশিক অনুদান প্রাপ্তির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ হাজার ১৩০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে এনবিআর খাতে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, যা সংশোধিত বাজেটে দাঁড়াচ্ছে ৫৩ হাজার কোটি টাকা। অন্যান্য খাত মিলিয়ে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৬৯ হাজার ৩৮২ কোটি টাকা, যা পরে সংশোধন করে ৬৯ হাজার ১০০ কোটি টাকা করা হয়।
আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে মোট অনুন্নয়নমূলক ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৭ হাজার ১৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে রাজস্ব ব্যয় ৬৯ হাজার ৫০৪ কোটি টাকা। চলতি বছরের মূল বাজেটে মোট অনুন্নয়নমূলক ব্যয় ৬৬ হাজার ৭৫৬ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে সংশোধিত বাজেটে ৬৭ হাজার ১২৫ কোটি টাকা এবং রাজস্ব ব্যয় ৬২ হাজার ৬৭৬ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়। সরকারের রাজস্ব ব্যয়ের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বেড়ে যাওয়ায় সংশোধিত বাজেটে অন্য লক্ষ্যগুলোর বাস্তবায়ন ব্যয় সঠিকভাবে না হলেও রাজস্ব ব্যয় বরং বেড়েছে।
চলতি বছরে উন্নয়ন ব্যয় অন্য বছরের তুলনায় কম হয়েছে। বছরের শুরুতে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা ধরা হলেও বাস্তবায়ন ব্যর্থতার কারণে সংশোধিত বাজেটে এডিপি বরাদ্দ কমিয়ে ২৩ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। নতুন বছরের বাজেটে এডিপি চূড়ান্ত করা হয়েছে ৩০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। দেশের চাহিদার কথা বলে সব সরকারের আমলেই এডিপির আকার বাড়িয়ে দেয়া হয়। কিন্তু বছর শেষে তা আর বাস্তবায়ন করা যায় না। এ রকম পরিসি'তিতে নতুন সরকারের এই বিশাল ব্যয়ের বাজেট কিভাবে বাস্তবায়িত হবে সে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।
এদিকে সরকারকে ঘাটতি অর্থায়ন নিশ্চিত করতে গিয়ে অভ্যন্তরীণ ঋণ গ্রহণ বাড়াতে হবে। এতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করার পাশাপাশি মূল্যস্ফীতিকে উস্কে দেয়ার ঝুঁকি থাকে। অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে সরকার এক বছরের কম সময়ের বিভিন্ন মেয়াদি ট্রেজারি বিল, ট্রেজারি বন্ড এবং সঞ্চয়পত্রের ওপর নির্ভরশীল।
অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধেও আগামী বছর সরকারকে বিপুল অর্থ ব্যয় করতে হবে। অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ বাবদ পরিশোধ করতে হবে ১৪ হাজার ৪৭১ কোটি টাকা, যা চলতি বছরের বাজেটে ছিল ১১ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার কোটি টাকা। বৈদেশিক ঋণের সুদ বাবদ আগামী বছরে পরিশোধ করতে হবে ১ হাজার ৩৩৭ কোটি টাকা। যা চলতি বছরের মূল বাজেটে ১ হাজার ২৯১ কোটি টাকা ধরা হলেও বছর শেষে দাঁড়াচ্ছে ১ হাজার ৩১১ কোটি টাকায়।
উল্লেখ্য, দুই বছর পর আবার জাতীয় সংসদে বাজেট উত্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী। গত দুই বছর সংসদের বাইরে বাজেট পেশ করা হয়েছিল।

প্রধানমন্ত্রীসহ আ.লীগের শীর্ষ নেতাদের ৬২ মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত




প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১২টি মামলাসহ রাজনৈতিক বিবেচনায় দায়ের করা ৬২টি মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সারা দেশে ব্যাপক সাড়া পড়ায় আবেদনের সময় আবারো ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। তবে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের মামলা প্রত্যাহারের ব্যাপারে এখনো কোন সিদ্ধান্ত হয়নি।
গতকাল বুধবার সচিবালয়ের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে রাজনৈতিক হয়রানি মামলা প্রত্যাহার সংক্রান্ত রিভিউ কমিটির আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা জানান কমিটির চেয়ারম্যান ও আইন প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট কামরুল ইসলাম। খবর এনএনবির।
বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াসহ শীর্ষ রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও আমলাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং তথ্য গোপনের অভিযোগে ৬৬৭টি মামলা দায়ের করা হয়। এগুলোসহ বিএনপি জোট সরকারের সময় দায়ের করা রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার করতে ২২ ফেব্রুয়ারি প্রত্যেক জেলায় ও মন্ত্রণালয় পর্যায়ে কমিটি গঠন করে সরকার। এ সুবিধা পেতে দুনেত্রীসহ শীর্ষ রাজনৈতিক নেতারা আবেদন করেছেন। শুধু ঢাকা জেলা যাচাই-বাছাই কমিটির কাছে ২ হাজার ৭৮১টি মামলা প্রত্যাহারের আবেদন পড়েছে। আর সারা দেশে ৪ হাজার ৮৫৯টি আবেদন জমা পড়েছে।
সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত প্রথম দিনের বৈঠকে মোট ১১৩টি মামলা যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। এ মামলাগুলোর মধ্যে রয়েছে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের করা ১২টি মামলাসহ ৬২টি মামলা রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হয়। মামলাগুলোর মধ্যে রয়েছে- আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য তোফায়েল আহমেদের বিরুদ্ধে ৯টি, সাবেক সাংসদ কামাল আহমেদ মজুমদারের ১৩টি, সাবেক হুইপ আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহর ৬টি, সাবেক প্রতিমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীরের ২টি, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আব্দুল মান্নানের ১টি, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের ১টি, বাহাউদ্দিন নাসিমের ৪টি এবং মকবুল হোসেনের ১টি।
এই ৬২টির মধ্যে দন্ডবিধির বিভিন্ন ধারায় দায়ের করা মামলা রয়েছে ৩৬টি, আর দুদকের দায়ের করা ২৬টি। এ পর্যন্ত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মামলা প্রত্যাহারের মোট আবেদন জমা পড়েছে ৮২৪টি। বৈঠক শেষে আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন রাজনৈতিক হয়রানি মামলা প্রত্যাহারের আবেদনের সময় আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হবে।
কমিটির প্রধান ও আইন প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, বিগত সরকারগুলোর সময়ে রাজনৈতিক বিবেচনায় দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে ৬২টি মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই ৬২টির মধ্যে দন্ডবিধির বিভিন্ন ধারায় দায়ের করা মামলা রয়েছে ৩৬টি, আর দুদকের দায়ের করা ২৬টি। দুদকের দায়ের করা মামলাগুলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পরবর্তী করনীয় ঠিক করতে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।
আইন প্রতিমন্ত্রী আরো জানিয়েছেন, বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের মামলা প্রত্যাহারের আবেদন এখনো বাছাই কমিটির হাতে পৌঁছায়নি। কমিটির কাছে আবেদন আসলে নিয়ম অনুযায়ী বিবেচনা করা হবে। এদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তার দুপুত্রসহ দলের প্রায় অর্ধশতাধিক সিনিয়র নেতা মামলা প্রত্যাহারের আবেদন জানিয়েছেন। এছাড়াও জামায়াতে ইসলামীর আমীরসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা চারটি মামলা প্রত্যাহারের আবেদন জানানো হয়েছে।

বাজেটের সুবিধা নিতে বন্দরে পৌঁছেছে দুই হাজার গাড়ি বোঝাই জাহাজ

বাজেটের সুবিধা নিতে আমদানি করা প্রায় দুই হাজার গাড়ি বোঝাই এম ভি লিলাক এইচ জাহাজটি গত সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম বন্দরে বহির্নোঙরে পৌঁছেছে। জাপান থেকে আমদানিকৃত বিপুল পরিমাণ রিকন্ডিশন্ড গাড়ি নিয়ে আসা জাহাজটি গতকাল পৌঁছতে পারছে কিনা তা নিয়ে গত কয়েক দিন ধরে অনিশ্চয়তা বিরাজ করছিল। বেশ কয়েকজন আমদানিকারকের আনা এই বিপুল পরিমাণ গাড়ি যদি ঘন্টা কয়েক পরে বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছতো তাহলে বিপুল পরিমাণ শুল্কে হেরফের হতো বলে মনে করা হচ্ছে। এই অবস্থায় গত সন্ধ্যায় জাহাজটি বহির্নোঙরে পৌঁছার পর তড়িঘড়ি করে গাড়িগুলোর শুল্কায়নের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হচ্ছিল বলেও সূত্র জানিয়েছে। বাজেটের জন্য গতরাত বারোটায় চট্টগ্রাম কাস্টমসে শুল্কায়ন কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। আজ নতুন শুল্কহার পাওয়ার পর এই অর্থবছরের শুল্কায়ন শুরু হবে।