কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ে দেয়া ভাষণে ওবামা যুক্তরাষ্ট্র মুসলিম বিশ্বের সাথে নতুন সূচনার ভিত গড়তে চায়


মমুসলিম বিশ্বের সাথে সম্পর্কের নতুন সূচনার ডাক দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। তিনি বলেছেন, মুসলিম দেশ এবং আমেরিকার মধ্যে সন্দেহ, অবিশ্বাস ও দ্বন্দ্ব অবশ্যই দূর হতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র এবং মুসলিম বিশ্বের মধ্যে বিরাজমান দূরত্ব কমিয়ে আনার উদ্দেশ্যে মধ্যপ্রাচ্য সফররত ওবামা গতকাল বৃহস্পতিবার কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রান্ড হলে দেয়া ভাষণে একথা বলেন। বক্তৃতার শুরুতেই বারাক হুসেন ওবামা বলেন, আস্‌সালামু আলাইকুম। আসুন আমরা নতুন করে শুরু করি। আমি এখানে এসেছি গোটা বিশ্বের মুসলমানদের সঙ্গে নতুন সূচনার ভিত গড়তে। যুক্তরাষ্ট্র ও মুসলমান কেউ কারো প্রতিযোগী নয়। আমরা পরস্পরকে সম্মান করব। পরস্পরের স্বার্থ দেখব। উগ্র পন'ায় বিশ্বাসীরা আমাদের সু-সম্পর্কে ধীরে ধীরে ভয় ঢুকিয়ে দিচ্ছে। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট এও স্বীকার করেন যে, সন্দেহ এবং অবিশ্বাসের জন্ম একদিনে সৃষ্টি হয়নি এবং এটি দূর করতে উভয় পক্ষকে যথোপযুক্ত উদ্যোগ গ্রহন করতে হবে। একের প্রতি অন্যের শ্রদ্ধা ফিরিয়ে আনতে হবে এবং উভয় পক্ষের মধ্যকার মূল ভিত্তিগুলো খুঁজে বের করতে হবে। মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউরোপ সফরের অংশ হিসাবে কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ভাষণ দেন ওবামা। এর আগে সৌদি আরব সফর করেন ওবামা। মিসরের পর গন্তব্য জার্মানি ও ফ্রান্স। বারাক ওবামা বলেন, মুসলিম ও আমেরিকার মধ্যে একটি নতুন সূচনার লক্ষ্যে এবং পারস্পরিক স্বার্থ ও শ্রদ্ধাবোধকে ত্বরান্বিত করতে আমি এখানে এসেছি। এজন্য সন্ত্রাসী কার্যক্রম, অযথা ভীতি এবং সন্দেহ ও দ্বন্দ্বের ঘূর্ণিপাক থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। যুগ যুগ ধরে চলা সন্দেহ ও দ্বন্দ্ব তার একটি মাত্র ভাষণেই যে দূর হয়ে যাবে এমনটিও মনে করেন না মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, উভয় পক্ষকেই না বলা মনের কথা খুলে বলতে হবে এবং সেই সাথে আমাদের পেছনের বন্ধ দরজাও খুলে দিতে হবে। এই ভাষণের মধ্য দিয়ে ওবামা বিশ্বের মুসলমানদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের হৃত ভাবমূর্তি ফেরানোর চেষ্টা নিয়েছেন। তবে মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে তিনি তার ভাষণে নতুন কোনও প্রস্তাব দেননি। ওবামা কেবল বলেন, ফিলিস্তিনিদেরকে সহিংসতা পরিহার করতে হবে। একই সঙ্গে তিনি তাদের প্রতি ইসরায়েলের অস্তিত্বের অধিকার স্বীকার করে নেওয়ার আহবান জানান। ইসরায়েল প্রসঙ্গে ওবামা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের ইহুদি বসতি স'াপন বৈধ বলে মানতে রাজি না। এই পদক্ষেপ পূর্ববর্তী চুক্তিগুলোর লঙ্ঘন এবং শান্তি প্রতিষ্টার চেষ্টায় বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। এখন এ সমস্ত বসতি স'াপন বন্ধ করার সময়। ভাষণের আগে ওবামা মিসরের প্রেসিডেন্ট হোসনি মুবারকের সঙ্গে দেখা করেন। মুবারকের সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এ অঞ্চলের মানুষের জন্য শান্তি ও সমৃদ্ধি বয়ে আনতে কিভাবে গঠনমূলক পথে এগিয়ে যেতে হয় তা নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। তিনি আরো বলেন, মুসলমানরা সবসময় যুক্তরাষ্ট্রের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবে ছিল। অভিন্ন অভিজ্ঞতা আমাদের আরো কাছে নিয়ে এসেছে। ওবামা নিজের মুসলিম শিকড়ের কথাও তুলে ধরে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রকে আজকের অবস'ানে আনতে মুসলিম সম্প্রদায়ও বড় ভূমিকা পালন করেছে। মুসলমানদের চমৎকার সব উদ্ভাবন পৃথিবীকে এগিয়ে নিতে অনেক বড় ভূমিকা রেখেছে। শৈশবে ইন্দোনেশিয়ায় থাকাকালে ভোরে আজানের মধুর শব্দ শুনে ঘুম ভাঙ্গার স্মৃতির কথাও তিনি ভাষণে উল্লেখ করেন। এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা মুসলিম বিশ্বের প্রতি যে ভাষণ দিয়েছেন তাতে ইসরাইল-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিরাজমান টানা পোড়েনকে আরো তীব্র করবে বলে মনে করছেন ইসরাইলের কর্মকর্তারা। মতাঁর এই পদক্ষেপ এরই মধ্যে ইসরাইলের জন্য উৎকণ্ঠা এবং বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওয়াশিংটনের সাথে বিরাজমান সম্পর্কের অবনতি ঘটতে পারে আশঙ্কা করে তেল আবিব এ ব্যাপারে সরকারীভাবে কোনো মন্তব্য করতে রাজী হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র এর আগে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব মেনে নেয়ার এবং অধিকৃত ফিলিস্তিনে ইহুদিবাদীদের অবৈধ বসতি বন্ধের আহ্বান জানানোর ফলে ওয়াশিংটন- তেল আবিবের সম্পর্কের মধ্যে টানাপোড়েন শুরু হয়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন