ঘূর্ণিঝড় আয়লার তাণ্ডবে বিভিন্ন জেলায় নিহত ১৩০ নিখোঁজ শতাধিক ।। লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি

ঘূর্ণিঝড় আয়লার তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড চারদিক। বিধ্বস্ত জনপদ। যেদিকে চোখ যায় পানি আর পানি। গ্রামে গ্রামে লাশ। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বিভিন্ন জেলায় ১৩০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে জানান প্রশাসনের কর্মকর্তারা। নিখোঁজ রয়েছে শতাধিক। জোয়ারে প্লাবিত হয়ে এখনও পানিবন্দি লাখ লাখ মানুষ। পুকুর ও মাছের ঘের ভেসে গেছে। বিধ্বস্ত হয়েছে ঘর বাড়ি। কোথাও কোথাও উদ্ধার কাজ শুরু হলেও অনেক এলাকায় এখনো শুরু হয়নি ত্রাণ তৎপরতা। খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানি সংকটে দুর্ভোগে পড়েছে উপদ্রুত এলাকার মানুষ। খবর ইউএনবির।
ঘূর্ণিঝড় আয়লার তাণ্ডবে সাতক্ষীরায় ৩২ জন, খুলনায় ২৭ জন, নোয়াখালীতে ২৫ জন, ভোলায় ১৩ জন, পটুয়াখালীতে ৯ জন, নরসিংদী ৪, লক্ষ্নীপুরে ৬ জন, বরিশালে ৯ জন, বাগেরহাটে ২ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২ জন এবং কক্সবাজারে ২ জন, নওগাঁয় ২ জন, রংপুরে ১ জন, রাজশাহীতে ২ জন এবং নাটোর ও মাগুরায় এক জন করে নিহত হয়েছে। খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস'পনা মন্ত্রণালয় কন্ট্রোল রুম ৯১ জন মারা যাওয়ার খবর নিশ্চিত করেছে।
সাতক্ষীরা: সর্বশেষ পাওয়া খবরে ৩২ টি লাশ পাওয়া গেছে সাতক্ষীরায়। আরো মৃতদেহ পানিতে ভাসছে বলে জানা গেছে। কিন্তু জেলা প্রশাসন বলছে ২৫ জন মারা গেছে। আশাশুনি ও শ্যামনগর উপজেলায় ৮ টি শিশু, ৫ জন মহিলা এবং ১০ জন পুরুষ মারা গেছে।
আয়লার তাণ্ডবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রাণহানি ঘটেছে উপকূলীয় জেলা খুলনায়। গতকাল দুপুর পর্যন্ত জেলা প্রশাসন ২০ জন মারা যাওয়ার খবর নিশ্চিত করেছে। নিহতদের মধ্যে কয়রা উপজেলায় ১৮ জন এবং দাকোপ ও বটিয়াগাটায় একজন করে।
নোয়াখালী: জেলার হাতিয়া এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায় সোমবারের ৩ জন সহ আয়লার তাণ্ডবে গতকাল পর্যন্ত ২৫ জন মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। কিন' হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গতকাল বিকালে ২৫ জন মারা যাওয়ার খবর নিশ্চিত করেছেন। বেসরকারি সূত্র ১৮টি লাশের পরিচয় নিশ্চিত করেছে। তারা হলেন নিজুম দ্বীপের রাহেলা বেগম(২৬) এবং নাজমা(১০)। চর বাশারের পিন্টু(১৫), রিয়াদ(৭), শফি(৬), নাফিস(৭), বাদশা(৩), সালেহা বেগম(৬০), সুমিতা রায়(২৫) এবং মমতা(৪)। বয়ার চরের রাজিব(২৪) এবং আরিফ(১৭)। কেরিং চরের ফাজানা(২৬), জহির(১৬), সাব্বির(১৫), সাজু(৩) এবং অজ্ঞাত ১২ বছরের এক কিশোর এবং চেয়ারম্যান ঘাট আশ্রয় কেন্দ্রে মালেকা খাতুন(৬০)।
নরসিংদীঃ ঝড়ের কবলে পড়ে এ জেলায় গত সোমবার মেঘনা নদীতে একটি যাত্রীবাহী নৌকা ডুবে চারজন মারা গেছেন। তিনজন এখনও নিখোঁজ রয়েছেন।
ভোলা: জেলায় ঘূর্ণিঝড় আয়লার আঘাতে ১৩ জন লোক মারা গেছে কিন' সরকারি কর্মকর্তারা ৯ জন মারা যাওয়ার খবর নিশ্চিত করেছেন। নিহতদের মধ্যে ৮ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন রাসেল(৩০), রিয়া(২), নাজনিন(২৫), মমতাজ(৩৫), শরিফ(৪০), রোজিয়ান(৪), ইদ্রিস মাঝি(৬৫) এবং মোজাম্মেল(৬০)।
পটুয়াখালী: জেলায় আয়লার আঘাতে মৃতের সংখ্যা ৯ জনে দাঁড়িয়েছে। নিহতদের মধ্যে বাউফল উপজেলায় রাজ্জাক(৫৫) গলাচিপা উপজেলায় মইজুন্নেসা(৫৫), সূর্য বানু(৫০), রোমান(১৩) দশমিনা উপজেলায় ডোলি রানী(৯) এবং সদর উপজেলায় সেকেন্দার আকন্দ। লহ্মীপুর: জেলা প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ কক্ষ জানায় নিহত ৬ জনের মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ে রামগতি উপজেলায় ঘর বিধ্বস্ত হয়ে ৪ জন এবং সদর উপজেলায় পানিতে ডুবে একজন মারা যায়। নিহতরা হলেন রামগতি উপজেলার আমেনা বেগম(৪৮), শাহিদা বেগম, রাসেল(১৩) এবং তার ভাই হেনজু(৭) এবং সদর উপজেলায় সফিক(৩৫)।
বরিশাল: জেলার মেহেন্দিগঞ্জ ও বাকেরগঞ্জে ৪ জন মারা গেছে। গতকাল সকালে মেহেন্দিগঞ্জে বন্যার পানিতে ডুবে সিতারা(৫৪), আব্দুল লতিফ(৫০), এবং জুলিয়া(৪) মারা যায়।
বাগেরহাট: জেলায় গত সোমবার আয়লা যখন আঘাত হানছিল তখন পানির স্রোতে দুইজন ভেসে যায়। গতকাল তাদের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ: ঘূর্ণিঝড় আয়লার প্রভাবে প্রচণ্ড বর্ষণের কারণে গতকাল সকালে নাচোল উপজেলায় মাটির ঘর ধসে পরে দুইজন মারা গেছে। নিহতরা ফজলু মিয়া(৫৫) এবং তার স্ত্রী মর্জিনা বেগম(৪০)।
কক্সবাজার: জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা এম আব্দুল আজিজ দুই জন মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন।
নাটোর: জেলার বাগাতিপাড়া উপজেলার পাকা রামপাড়া গ্রামে ঘূর্ণিঝড় আয়লার তাণ্ডবে ঘর বিধ্বস্ত হয়ে আব্দুল হাকিম নামে একজন মারা যায়।
মাগুরা: জেলার সদর উপজেলায় ঘর বিধ্বস্ত হয়ে সুকুমার বাখতা(৬০) নামের একজন মারা যায়।

জোয়ার ও ভারী বৃষ্টিতে নগরীর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত ।। জন দুর্ভোগ নালা ভরাট থাকায় ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি



ঘূর্ণিঝড় আয়লা উপকূল দিয়ে অতিক্রম করার পর এর প্রভাবে গতকাল চট্টগ্রামে দিনভর বৃষ্টিপাত হয়েছে, তবে সন্ধ্যার দিকে এক ঘন্টা মুষলধারে বৃষ্টিপাত হয়েছে। এতে মহানগরীর অনেক নিম্নাঞ্চল পানিতে ডুবে যায়। পরে বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ার পর পরিস্থিত স্বাভাবিক হয়ে আসে। বৃষ্টিপাতের পাশাপাশি দুই দফা জোয়ারের কারণেও নগরীর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। এতে নগরবাসী ব্যাপক দুর্ভোগে পড়ে।
আয়লা উপকূল অতিক্রম করলেও চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও মংলা সমুদ্র বন্দরকে তিন নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এর প্রভাবে আজকেও প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় আয়লা দেশের উপকূল দিয়ে অতিক্রম করার পর আবহাওয়া এখনো স্বাভাবিক হয়নি। আরো দু একদিন সময় লাগবে পরিসি'তি স্বাভাবিক হতে। এর প্রভাবে চট্টগ্রাম মহানগরীতে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছে। তবে সন্ধ্যার পর এক ঘন্টা মুষলধারে বৃষ্টি নগরীতে ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করে। সবগুলো নালা ভরাট হয়ে যাওয়ায় নগরীর নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এতে নিম্নাঞ্চলের দোকান, বাড়িঘর পানিতে নিমজ্জিত হয়। বৃষ্টি কমে যাওয়ার পর অবশ্য জলাবদ্ধতা কমে আসে। প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে অফিস ফেরত নগরবাসী ব্যাপক দুর্ভোগে পড়ে, যানবাহন চলাচল কমে যায়।
এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট জোয়ারেও দুপুরে নগরীর অনেক নিচু এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। রাতে ও দিনে দু দফায় জোয়ারের ফলে নগরীর আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকা, হালিশহর, শান্তিবাগ, ঘাট ফরহাদবেগ, বাকলিয়া ও চকবাজার এলাকার অনেক নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। এতে রাস্তায় প্রচুর কাদা ও পলি জমে যাওয়ায় সকাল থেকে ব্যাপক দুর্ভোগে পড়ে নগরবাসী। দুপুরে আরেক দফা জোয়ারের কারণে ঘরের মধ্যে আটকা পড়ে সবাই।
চট্টগ্রাম আবহাওয়া দপ্তর জানায়, গতকাল চট্টগ্রামে ৩৫ মিঃমিঃ বৃষ্টিপাত হয়েছে। সাগর এখনো উত্তাল থাকায় তিন নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। সব মাছধরা নৌকা ও ট্রলারকে নিরাপদ আশ্রয় থাকতে বলা হয়েছে। আজকের আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, বঙ্গোপসাগরে বাতাসের যে-চাপ রয়েছে তা স্বাভাবিক হতে আরো দু-একদিন সময় লাগবে। ফলে এক দুদিন প্রচুর বৃষ্টিপাত হবে, এতে তাপমাত্রাও কমে আসবে।
আবহাওয়া দপ্তর বলেছে, গতকাল চট্টগ্রামের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সর্বনিম্ন ছিল ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতরাতে ভাটা হয় রাত ২টা ২৯ মিনিটে। দ্বিতীয় ভাটা হবে আজ দুপুর ২টা ৪১ মিঃ।


বিভিন্ন বোর্ডে পাসের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের সংখ্যা

ঢাকা বোর্ড ৬৯.১১ % ১৯,০৮৬
রাজশাহী ৫৮.৪১ % ৪,৪৭৪
কুমিল্লা ৭২.৭৭ % ৪২০২
যশোর ৬৮.০১ % ৪৭৬৭
চট্টগ্রাম ৬৯.৬১ % ৪৫২৯
বরিশাল ৬৫.৬৩ % ১৬৮৮
সিলেট ৭৮.৭১ % ১৮৯৬
দিনাজপুর ৬৩.৫৮ % ৫২৯২
মাদ্রাসা বোর্ড ৮৫.৮৫ % ১৬,৩০৯
কারিগরি বোর্ড ৭০.৯০ % ৬৪
মোট ৭০.৮৯ ৬২,৩০৭

চট্টগ্রাম বোর্ডে এবার পাসের হার কমলো যে কারণে

এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে নির্বাচনী পরীক্ষা পাসের বাধ্যবাধকতা ছিল গত কয়েক বছর ধরেই। কিন্তু এবার চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের কয়েকটি স্কুলের কিছু শিক্ষার্থী নির্বাচনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হয়েও হাইকোর্টের আদেশে পরীক্ষার অনুমতি পায়। তাদের দেখাদেখি মফস্বলের অনেক স্কুল কর্তৃপক্ষই অনেককে ফরম পূরণের সুযোগ দেয়। পরীক্ষার দু দিন আগেও তাদের ফরম পূরণ করতে দেখা যায়। ওসব শিক্ষার্থীই পাসের হার কমাতে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে বলে মনে করে শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষ। মফস্বল হতে গড়ে শতকরা ৫ ভাগ পরীক্ষার্থী নির্বাচনী পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ হয়েও পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পেরেছে বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষাবোর্ডের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা। এছাড়া মফস্বলের অনেক স্কুলেই শিক্ষকসহ জনবল সংকটের পাশাপাশি অবকাঠামোগত অপ্রতুলতায় ফলাফল তুলনামূলক খারাপ হয়েছে বলে মনে করে শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষ। এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. আবদুল আজিজ দৈনিক আজাদীকে বলেন, নগরীতে এবার ফলাফল গতবারের চেয়ে একটু ভালো। কিন' মফস্বল এলাকার ফলাফল বিপর্যয়ের কারণেই চট্টগ্রাম বোর্ডে পাসের হার এবার কমেছে। তিনি বলেন, কিছু শিক্ষার্থী নির্বাচনী পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ হওয়ার পরও তারা পরীক্ষা দেওয়ার অনুমতি পেয়েছিল। এ সুযোগে কৌশলে গ্রামের অনেক স্কুলই টেস্টে অনুত্তীর্ণদের পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেয়। এরাও পাসের হার কমাতে ভূমিকা রেখেছে। আজিজ বলেন, মফস্বলে শিক্ষক সংকট তীব্র। সরকারি স্কুলেও শিক্ষক সংকট রয়েছে। গ্রামের স্কুলগুলোতে শিক্ষকরা যেতে চান না। অনেক বিদ্যালয়েই পরিচালনা পরিষদ নেই দীর্ঘদিন ধরে। এর ফলে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় পাসের হার কমেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
জানা গেছে, মহানগরী ছাড়া চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের প্রায় সব এলাকার স্কুলেই পাসের হার গতবারের চেয়ে কমেছে। কেবল খাগড়াছড়ি জেলায়ই পাসের হার কমেছে শতকরা ২৭ দশমিক ৮২ ভাগ। নগরী বাদে চট্টগ্রাম জেলার অন্যান্য এলাকাসহ রাঙ্গামাটি এবং কক্সবাজারেও পাসের হার কমেছে। এসব কারণে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে এবার পাসের হার ৩ দশমিক শূন্য এক ভাগ কমে গেছে। এ বছর গণিত বিষয়ে পাসের হার শতকরা ৭৮ ভাগ। গতবার তা ছিল ৮২ ভাগ। এ বিষয়টিও পাসের হার কমাতে ভূমিকা পালন করেছে বলে মনে করে বোর্ড কর্তৃপক্ষ। পাসের হার গতবার ছিল ৭২ দশমিক ৬২ ভাগ। এবার তা কমে ৬৯ দশমিক ৬১ ভাগে নেমে আসে।
জানা যায়, মহানগর এলাকায় গতবার পাসের হার ছিল ৮২ দশমিক ৭৮ ভাগ। এবার তা দশমিক ১৪ ভাগ বেড়ে দাঁড়ায় ৮২ দশমিক ৯২ ভাগ। মহানগর বাদে চট্টগ্রাম জেলার পাসের হার এবার ২ দশমিক ৬৬ ভাগ কমেছে। গতবার পাসের হার ছিল ৬৭ দশমিক ৬২ ভাগ। এবার তা কমে দাঁড়ায় ৬৪ দশমিক ৯৬ ভাগে। কক্সবাজার জেলায় গতবার পাসের হার ৭১ দশমিক ৩৪ ভাগ থাকলেও এবার তা কমে দাঁড়িয়েছে ৬৯ দশমিক ৫৬ ভাগে। রাঙ্গামাটি জেলায় গতবার পাসের হার ছিল ৬৩ দশমিক ৮৪। এবার তা শতকরা ১ দশমিক ৪৮ ভাগ কমে ৬২ দশমিক ৩৬-তে নেমে এসেছে। খাগড়াছড়ি জেলায় এবার ফল বিপর্যয় ঘটেছে। গতবার ওই জেলায় যেখানে শতকরা ৬৭ দশমিক ৯৯ ভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছিল এবার সেখানে পাস করেছে মাত্র ৪০ দশমিক ১৭ ভাগ শিক্ষার্থী। মফস্বলে এভাবে পাসের হার কমায় চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে পাসের হার এবার গতবারের চেয়ে কমেছে বলে মনে করা হচ্ছে। মফস্বলের মধ্যে কেবল বান্দরবানে পাসের হার গতবারের চেয়ে মাত্র দশমিক ৮৭ ভাগ বেড়েছে। গতবার সেখানে পাসের হার ছিল ৫৫ দশমিক শূন্য ৩ আর এবার তা ৫৫ দশমিক ৯০ ভাগ।
শিক্ষাবোর্ড সূত্র জানায়, গত কয়েক বছর ধরে চট্টগ্রাম বোর্ডে পাসের হার ক্রমবর্ধমান ছিল। ২০০৪ সালে পাসের হার ছিল মাত্র ৪৬ দশমিক ৫৫ ভাগ। ২০০৫ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৬০ দশমিক ৯২-তে। ২০০৬ সালে তা আরও বেড়ে ৬৩ দশমিক ৮৭ ভাগে দাঁড়ায়। তবে ২০০৭ সালে তা কিছুটা কমে ৫৭ দশমিক ৯৪ ভাগে এলেও পাসের হার গতবার অনেক বেড়ে যায়। ২০০৮ সালে পাসের হার ছিল ৭২ দশমিক ৬২ ভাগ।

সেরা ১০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে নগরীর বাইরের একটিও নেই ।। কলেজিয়েট ও খাস্তগীর স্কুলের সাফল্য অক্ষুণ্ন

জিপিএ-৫ দিয়েই প্রধানত সাফল্য বিবেচনা করা হয়। সেই সাফল্যের ধারাবাহিকতা এবারো অক্ষুণ্ন রেখেছে নগরীর দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কলেজিয়েট স্কুল এবং ডা. খাস্তগীর বালিকা বিদ্যালয়। চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে ২০০৯ সালের জিপিএ-৫ প্রাপ্তির দিক দিয়ে সেরা ১০ স্কুলের তালিকায় এই দুটি স্কুল প্রথম ও দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। ফলাফল পর্যালোচনায় দেখা যায় সেরা ১০ স্কুলের মধ্যে ছটি বিদ্যালয় সরকারি, বাকী ৪টি বেসরকারি স্কুল। ফলে সরকারি স্কুলের সাফল্যের পাল্লা অনেক ভারী।
এবারের এসএসসির ফলাফলে প্রথম অবস'ানে থাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩৪৬ জন, পরীক্ষায় পাস করেছে ৪৫৭ জন। আর পরিক্ষার্থী ছিল ৪৬৪ জন। দ্বিতীয় অবস'ানে থাকা ডা. খাস্তগীর সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিক্ষার্থী ছিল ৩৬৩ জন, পাস করেছে ৩৬২ জন, আর জিপিএ ৫ পেয়েছে ২২৯ জন। সংখ্যার দিক দিয়ে কলেজিয়েট স্কুল (৯৮.৪৯%) বেশী হলেও শতকরা বিবেচনায় ডা. খাস্তগীর স্কুল (৯৯.৭১%) এগিয়ে। তৃতীয় অবস'ানে আছে সরকারী মুসলিম হাইস্কুল। এ স্কুলে ৪৪৬ জন পাস করা শিক্ষার্থীর মধ্যে ১৯৬ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে।
এরপর ক্রমান্বয়ে বাংলাদেশ মহিলা সমিতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (বাওয়া স্কুল) জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৯১ জন। পরিক্ষার্থী ছিল ২৭৬ জন, নাসিরাবাদ সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিক্ষার্থী ছিল ৩৮৭ জন, জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৮৫ জন। নৌ-বাহিনী হাইস্কুল এন্ড কলেজের পরিক্ষার্থী ছিল ২৯৭ জন, জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৫৫ জন। চট্টগ্রাম সরকারী হাইস্কুলে পরিক্ষার্থী ছিল ২০১ জন, জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৩৮ জন। চিটাগাং পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের ১৩১ জন পরিক্ষার্থীর মধ্যে ১১২ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। চট্টগ্রাম সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ১৮২ জন পরিক্ষার্থীদের মধ্যে ৯৮ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে এবং দশম অবস'ানে থাকা ইস্পাহানি পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজে ১০৯ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৮৭ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে।
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪৫২৯ জন। শিক্ষাবোর্ডের দেয়া সেরা ১০ প্রতিষ্ঠানের জিপিএ-৫ এর সংখ্যা ১,৭৩৭ জন। বাকী ২,৭৯২ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে চট্টগ্রামের ৮৯৬ টি স্কুল থেকে। গতবার চট্টগ্রামে সেরা দশ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে নগরীর বাইরের দুটি প্রতিষ্ঠান ছিল। এবার একটিও নেই। চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আবু তাহের দৈনিক আজাদীকে বলেন, প্রতিযোগিতা বেড়ে যাওয়ায় সরকারী স্কুলগুলো অনেক বেশী ভাল করছে। বেসরকারী স্কুলগুলো ক্রমান্বয়ে এগিয়ে আসছে।

হালদার দু’পাড়ে প্রাণের জোয়ার রেণু উৎপাদনে ব্যস্ত কয়েক হাজার মানুষ

হালদা নদীর পাড়ে ডিম থেকে রেণু উৎপাদনে ব্যস্ত ডিম আহরণকারীরা। নদীর দুই পাড়ে কয়েক হাজার মানুষ রেণু উৎপাদন করছেন। অংকুরী ঘোনা থেকে মদুনা ঘাট পর্যন্ত নদীর সতের মাইল জুড়ে রেণু উৎপাদন কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করছেন কয়েক হাজার মানুষ। গত ২৫ মে দিবাগত রাতে প্রচণ্ড বৃষ্টির কারণে নদীতে পাহাড়ি ঢল বেড়ে গেছে। ফলে নদীর দুই তীরে সনাতনী পদ্ধতিতে রেণু উৎপাদনের জন্য যেসব কুয়া স্থাপন করা হয়েছে যেখানে পানি ঢুকে যেতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে। যদি কুয়াতে নদীর পানি ঢুকে তাহলে আহরিত ডিম থেকে রেণু উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে। আধুনিক পদ্ধতিতে হালদা নদী থেকে আহরিত ডিম থেকে রেণু পোনা উৎপাদনের জন্য সরকারি ভাবে যেসব হ্যাচারি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে এতে লোকবল কম। এছাড়া ডিম আহরণ করে হ্যাচারি পর্যন্ত নিতে সময় লাগার কারণে বেশির ভাগই সনাতনী পদ্ধতিতে রেণু উৎপাদন করছে। তাছাড়া সরকারি হ্যাচারি রেণু উৎপাদন করলে কিছু অর্থ পরিশোধ করতে হয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। বিদ্যুৎ গোলযোগের জন্য সরকারি হ্যাচারিতে রেণু উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার শঙ্কাও রয়েছে। গত দুই বছরের তুলনায় এবার হালদায় অধিক ডিম ছেড়েছে মা মাছ। এদিকে একটি অসাধু চক্র অংকুরী ঘোনা, গড়ণ্ডয়ারা, সিপাহীর ঘাট, উত্তর মাদার্শা মাছুয়া ঘোনায় কৃত্রিম রেণু হালদার রেণু হিসাবে বেশি দামে বিক্রির চেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

জিপিএ’র ভিত্তিতেই একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি করা হবে- শিক্ষামন্ত্রী

একাদশ শ্রেণীতে (কলেজ) ভর্তি আগের মতোই এসএসসি’র ফলাফলের (জিপিএ) ভিত্তিতে হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ। ভর্তি সংকট নিরসনে প্রয়োজনে আসন সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি কলেজে দ্বিতীয় শিফট চালু করা হবে বলেও জানান তিনি। এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী একথা জানান। নূরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, এবারো উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ভর্তির ক্ষেত্রে আগের নীতিমালাই থাকবে। আগের নীতিমালা অনুযায়ী, এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতেই কলেজগুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। খবর বিডিনিউজের।
নীতিমালা অনুযায়ী দুই শিক্ষার্থীর ফল একই হলে যার বয়স বেশি তাকে ভর্তি করা হয়। তবে এ বিষয়টি নিয়ে নেতিবাচক সমালোচনা রয়েছে। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রী বলেন, আমরা সবার সমালোচনা গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করবো। কলেজগুলোতে আসন সংকটের কারণে বিগত বছরগুলোতে এসএসসিতে ভালো ফল করেও অনেক শিক্ষার্থী ভাল কলেজে ভর্তি হতে পারেনি। এমনকি জিপিএ-৫ পাওয়া অনেক শিক্ষার্থী কাঙিক্ষত কলেজে ভর্তির সুযোগ পায়নি।
মঙ্গলবার প্রকাশিত এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় সারাদেশে দশ বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৬২ হাজার ৩০৭ শিক্ষার্থী। এরমধ্যে এসএসসিতে জিপিএ- ৫ প্রাপ্তদের সংখ্যা ৪৫ হাজার ৯৩৪। কিন' ভালো কলেজে আসন সংকট থাকায় এসব মেধাবী অনেক শিক্ষার্থীই তাদের কাঙ্খিত কলেজে ভর্তি হতে পারবে না বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
শিক্ষা মন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ভর্তির বিষয়টা সত্যিই একটা বড় সমস্যা। বিষয়টি নিয়ে আমরা ইতিমধ্যে কলেজের অধ্যক্ষদের নিয়ে বৈঠকে কীভাবে আসন বাড়ানো যায় তা নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা আবারও তাদের সঙ্গে বসব। প্রয়োজনে কলেজে ডাবল শিফট চালু করবো, আসন বাড়াবো।

গত বছরের সাথে ফলাফল পার্থক্য

এবার সব বোর্ডের সর্বমোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১০,৫৮,৬৭৪। যা গত বছরের চেয়ে ৫২,১০৫ জন বেশি। এবার পাস করেছে ৭,৫০,৫৩৮। গত বছর পাস করেছিল ৭,২৬,৫৬৩। এবার ফেল করেছে ৩,০৮,১৩৬। গত বছর ফেলের সংখ্যা ছিল ২,৮০,০০৬। এবার পাসের শতকরা হার ৭০.৮৯%। গত বছর ছিল ৭২.১৮%। এবার ৮টি সাধারণ শিক্ষাবোর্ডের মোট পরীক্ষার্থী ছিল ৭,৯৭,৮৯১।গত বছর ছিল ,৪৩,৬০৯। পাস করেছে ৫,৩৭,৮৭৮। গত বছর পাস করেছিল ৫,২৬,৫৭৬। এবার ফেল করেছে ২,৬০,০১৩। গত বছর ফেল করেছিল ২,১৭,০৩৩। এবার পাসের হার ৬৭.৪১%। গত বছর ছিল ৭০.৮১%। মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে ৬২,৩০৭। গত বছর পেয়েছিল ৫২,৫০০। এবার ৮ শিক্ষাবোর্ডে শতভাগ পাস করেছে ২,৭২৬ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। গত বছর ছিল ২,২৭২টি। অন্যদিকে শূন্য পাস করেছে এরূপ প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা এবার ৭২টি। গত বছর ছিল ৯১টি। এবার বহিষ্কারের মোট সংখ্যা ৫৪১। গত বছর ছিল ৭০৭।

জিপিএঃ ৭৬ থেকে ৪৫, ৯৩৪


এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ২০০১ সালে গ্রেডিং পদ্ধতি চালুর প্রথম বছর জিপিএ-৫ পেয়েছিল মাত্র ৭৬ জন, এবার আটটি শিক্ষা বোর্ডে তা বেড়ে হয়েছে ৪৫ হাজার ৯৩৪ জন। খবর বিডি নিউজের। ২০০৪ সাল থেকে শিক্ষার্থীদের পাওয়া মোট নম্বরের সঙ্গে চতুর্থ বিষয়ের নম্বর যুক্ত হওয়ায় জিপিএ-৫ পাওয়ার সংখ্যা বেড়েছে বলে মনে করেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
২০০১ সালে গ্রেডিং পদ্ধতি চালুর প্রথম বছর জিপিএ-৫ পেয়েছিল মাত্র ৭৬ জন। এরপর এসএসসিতে ২০০২ সালে পায় ৩২৭ জন, ২০০৩ সালে ১ হাজার ৩৮৯ জন, ২০০৪ সালে ৮ হাজার ৫৯৭ জন, ২০০৫ সালে ১৫ হাজার ৬৪৯ জন, ২০০৬ সালে ২৪ হাজার ৩৮৪ জন, ২০০৭ সালে ২৫ হাজার ৭৩২ জন, গত বছর ছিল ৪১ হাজার ৯১৭জন। এবার এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫ হাজার ৯৩৪জন। গতবারের চেয়ে এ সংখ্যা চার হাজার ১৭ জন বেশি।

জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতে নতুন ইতিহাস ।। এসএসসির ফল প্রকাশ, চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে পাসের হার ৬৯.৬১ ।। মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪৫২৯ জন



জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতে এবার নতুন ইতিহাস গড়েছে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড। তবে পাসের শতকরা হারের ক্ষেত্রে ছন্দপতন হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১২ টায় চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের অধীনে সকল কেন্দ্রে একযোগে ফলাফল প্রকাশিত হয়। সারা দেশের শিক্ষাবোর্ডগুলোতে একযোগে এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ আবু তাহের স্বাক্ষরিত ফলাফলের কপি সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রগুলোতে সকালে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
এবারের ফলাফলের রেকর্ড সংখ্যক ৪ হাজার ৫শত ২৯ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। গতবার এ সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ৩শ ১৬ জন। চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে এবার পাসের হার ৬৯ দশমিক ৬১ শতাংশ। গত কয়েক বছরের পাসের ক্রমবর্ধমান শতকরা হারে এবার ছন্দপতন হয়েছে। গতবার এই হার ছিল ৭২ দশমিক ৬২ শতাংশ।
এদিকে ২০০৪ সালে পাসের হার ৪৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ থেকে ক্রমবর্ধমান হারে ২০০৫ সালে ৬০ দশমিক ৯২ শতাংশ, ২০০৬ সালে ৬৩ দশমিক ৮৭ শতাংশ ছিল। এবার পাসের শতকরা হারে ৩ দশমিক ১ শতাংশ কমলো। এবার জিপিএ-৫ এর সংখ্যা গতবারের তুলনায় বেড়েছে ২১৩ জন।
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় মোট ৬২ হাজার ১০৭ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ৪৩ হাজার ১৩২ জন। এদের মধ্যে ২২ হাজার ৫০ জন ছাত্র এবং ছাত্রী ২১ হাজার ৮২ জন। এক্ষেত্রে ছাত্রদের পাসের শতকরা হার ৭২ দশমিক ৪৮ শতাংশ এবং ছাত্রীদের পাসের শতকরা ৬৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ।
শিক্ষাবোর্ড সূত্র জানায়, মোট ৬২ হাজার ১০৭ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ৬১ হাজার ৯৬৪ জন।এবারে পরীক্ষায় ৩০ হাজার ৪২২ জন ছাত্র ও ৩১ হাজার ৫৪২ জন ছাত্রী অংশগ্রহণ করে।
চট্টগ্রাম বোর্ডে এবার বিজ্ঞান বিভাগে মোট ১৩ হাজার ৭১ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ১০ হাজার ৮৬৬ জন। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছাত্র ৭ হাজার ৬০৭ জন এবং ছাত্রীর সংখ্যা ৫ হাজার ৪৬৪ জন। পাস করা পরীক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্রের সংখ্যা ৬ হাজার ৩৭৫ এবং ছাত্রীর সংখ্যা ৪ হাজার ৪৯১ জন।
বিজ্ঞান বিভাগে ছাত্র পাসের হার ৮৩ দশমিক ৮০ শতাংশ ও ছাত্রীদের পাসের হার ৮২ দশমিক ১৯ শতাংশ। গতবারের তুলনায় এই বিভাগে পাসের হার কমেছে। এবার মোট পাসের হার ৮৩ দশমিক ১৩ শতাংশ হলেও গতবার এই হার ছিল ৮৫ দশমিক ৩৪ শতাংশ।
মানবিক বিভাগ থেকে অংশ নেয়া মোট ১১ হাজার ৮৩৮ পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ৬ হাজার ২৯৪ জন। এখানে পাসের হার ৫৩ দশমিক ১৭ শতাংশ। মোট পরীক্ষার্থীর মধ্যে মানবিক বিভাগে অংশ নেয়া ছাত্রদের সংখ্যা ৩ হাজার ১৭৭ এবং ছাত্রীদের সংখ্যা ৮ হাজার ৬৬১ জন। এর মধ্যে ছাত্র পাস করেছে ১ হাজার ৭২৪ এবং ছাত্রী পাস করেছে ৪ হাজার ৫৭০ জন। ছাত্রদের পাসের হার ৫৪ দশমিক ২৭ শতাংশ এবং ছাত্রীদের পাসের হার ৫২ দশমিক ৭৭ শতাংশ। ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে অংশ নেয়া মোট ৩৭ হাজার ৫৫ পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ২৫ হাজার ৯৭২ জন। এর মধ্যে ছাত্র ১৩ হাজার ৯৫১ এবং ছাত্রী ১২ হাজার ২১ জন। এই বিভাগে পাসের হার ৭০ দশমিক ৯ শতাংশ। ছাত্রদের পাসের হার ৭১ দশমিক ৪ শতাংশ এবং ছাত্রীদের পাসের হার ৬৯ দশমিক ২ শতাংশ। এই বিভাগে অংশগ্রহণকারী ছাত্রদের সংখ্যা ১৯ হাজার ৬৩৮ জন এবং ছাত্রীদের সংখ্যা ১৭ হাজার ৪১৭।
এদিকে বিজ্ঞান বিভাগের মতো মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে এবার পাসের হারের ছন্দপতন ঘটেছে। মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে এবার পাসের হার যথাক্রমে ৫৩ দশমিক ১৭ শতাংশও ৭০ দশমিক ৯ শতাংশ। গতবার পাসের হার ছিল যথাক্রমে ৫৮ দশমিক ৭০ শতাংশ ও ৭২ দশমিক ১৩ শতাংশ। প্রাপ্ত ফলাফলে জানা গেছে মোট জিপিএ-৫ পাওয়া ৪ হাজার ৫২৯ পরীক্ষার্থীর মধ্যে বিজ্ঞান থেকে পেয়েছে ৩ হাজার ৪০২ জন। মানবিক থেকে পেয়েছে ৪৪ জন এবং ব্যবসায় শিক্ষা থেকে পেয়েছে ১ হাজার ৮৩ জন।
এর মধ্যে ছাত্রদের সংখ্যা ২ হাজার ৪৯৯ এবং ছাত্রীদের সংখ্যা ২ হাজার ৩০ জন। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পাওয়া ছাত্রদের সংখ্যা ১ হাজার ৯৯৯ জন এবং ছাত্রীদের সংখ্যা ১ হাজার ৪০৩ জন। সবচেয়ে কম জিপিএ-৫ পাওয়া মানবিক বিভাগে ১৩ জন ছাত্র এবং ৩১ জন ছাত্রী।
ব্যবসায় শিক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া ছাত্রদের সংখ্যা ৪৮৭ এবং ছাত্রীদের সংখ্যা ৫৯৬ জন। মোট অংশগ্রহণকারী পরীক্ষার্থীর মধ্যে শতকরা ৭ দশমিক ৩১ শতাংশ পরীক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। জিপিএ-৪ থেকে ৫ পর্যন্ত পেয়েছে ১২ হাজার ৪ জন পরীক্ষার্থী। এর মধ্যে বিজ্ঞান থেকে ৪ হাজার ২০৩। মানবিক থেকে ৭৭৮ ও ব্যবসায় শিক্ষা থেকে ৭ হাজার ২৩ জন। এর মধ্যে মোট ৬ হাজার ২০১ ছাত্র এবং ৫ হাজার ৮০৩ জন ছাত্রী।
জিপিএ-৩ দশমিক ৫ থেকে ৪ পর্যন্ত পেয়েছে ৮ হাজার ৮৮৩। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পেয়েছে ১ হাজার ৭৩৭ জন। মানবিকে ১ হাজার ২১৯ জন এবং ব্যবসায় শিক্ষা থেকে পেয়েছে ৫ হাজার ৯২৭ জন। এদের মধ্যে ছাত্র ৪ হাজার ৬৪১ এবং ছাত্রী ৪ হাজার ২৪২ জন।
জিপিএ-৩ থেকে ৩ দশমিক ৫ পর্যন্ত পাওয়া মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৯ হাজার ৩৩৬ জন। বিজ্ঞান থেকে ১ হাজার ৭৫, মানবিক থেকে ১ হাজার ৮৭৪, ও ব্যবসায় শিক্ষা থেকে ৬ হাজার ৩৮৭ জন। এদের মধ্যে ছাত্র ৪ হাজার ৭১৬ ও ছাত্রী ৪ হাজার ৬২০ জন।
জিপিএ-২ থেকে ৩ পর্যন্ত পেয়েছে মোট ৮ হাজার ৬০ পরীক্ষার্থী। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ৪৪৬ জন। মানবিক থেকে ২ হাজার ২৫৭ ও ব্যবসায় শিক্ষা থেকে ৫ হাজার ৩৫৭ জন। এর মধ্যে ছাত্র ৩ হাজার ৮৬৪ ও ছাত্রী ৪ হাজার ১৯৬ জন।
জিপিএ-১ থেকে ২ পর্যন্ত পাওয়া ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৩২০ জন। বিজ্ঞান থেকে ৩ জন। মানবিক থেকে ১২২ জন এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে ১৯৫ জন। এদের মধ্যে ছাত্র রয়েছে ১২৯ ও ছাত্রী ১৯১ জন।
এদিকে শিক্ষাবোর্ড থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, এবার ছাত্রছাত্রী উভয়ের ক্ষেত্রে পাসের হার কমেছে। এই হার যথাক্রমে ৭২ দশমিক ৪৮ শতাংশ এবং ৬৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ। গতবার এক্ষেত্রে ছাত্রদের পাসের শতকরা হার ছিল ৭৪ দশমিক ৬২ শতাংশ এবং ছাত্রীদের পাসের হার ৭০ দশমিক ৬০ শতাংশ। চট্টগ্রাম মহানগরীতে এবার পাসের হার ৮২ দশমিক ৯২ শতাংশ এবং (জেলায় মহানগর বাদে) পাসের হার ৬৪ দশমিক ৯৬ শতাংশ।
মহানগরসহ জেলার পাসের হার ৭২ দশমিক ৩৪ শতাংশ।
কক্সবাজার জেলায় পাসের হার ৬৯ দশমিক ৫৬ শতাংশ, রাঙ্গামাটি জেলায় পাসের হার ৬২ দশমিক ৩৬ শতাংশ, খাগড়াছড়ি জেলায় পাসের হার ৪০ দশমিক ১৭ শতাংশ, বান্দরবান জেলায় পাসের হার ৫৫ দশমিক ৯০ শতাংশ।
পাসের হার শূন্য এধরনের স্কুলের সংখ্যা গতবার দুটি থাকলেও এবার কমেছে ১টি। গত ৩ বছরে এক নাগাড়ে হাসের হারে শূন্য প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা গতবার ১টি থাকলেও এবার তা নেই।
পরীক্ষার ফলাফল সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে চট্টগ্রাম বোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউসুফ দৈনিক আজাদীকে বলেন, ফলাফল আশানুরূপ হয়েছে। ছাত্র, শিক্ষক ও অভিভাবকদের সম্মিলিত প্রয়াসের ফল এটি। শিক্ষার যথাযথ মান নিশ্চিত করে সামনের দিনগুলোতে আমরা আরো ভালো ফলাফলের প্রত্যাশায় রইলাম। প্রসঙ্গত চট্টগ্রাম বোর্ডে ৯০৬ বিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থীরা ১১৩টি কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে।
এবার ২৩ জন পরীক্ষার্থীর ফলাফল স'গিত রাখা হয়েছে। বোর্ড কর্তৃপক্ষ জানায়, ফলাফলে কোনো ভুলত্রুটি পরিলক্ষিত হলে তা ফলাফল প্রকাশের দিন হতে পরবর্তী ৩০দিনের মধ্যে বোর্ড কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে।