দেশের নদ-নদীগুলোকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হবে বিশ্ব পরিবেশ দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

দেশের নদ-নদীগুলোকে যে কোনও মূল্যে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে গতকাল শুক্রবার জাতীয় পরিবেশ পদক-২০০৯ বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি পরিবেশ বিপর্যয় মোকাবেলায় নানামুখী গবেষণার জন্য সরকারের সহযোগিতার আশ্বাসও দেন। খাদ্য নিরাপত্তার অংশ হিসেবে অন্তত ২/৩ বছরের খাদ্য মজুত করার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সবাইকে তৈরি থাকারও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে পরিবেশ অধিদপ্তর, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় সবার অংশগ্রহণের আহ্বানকে সামনে রেখে শুক্রবার সারা বিশ্বে পালিত হচ্ছে পরিবেশ দিবস।এবারের পরিবেশ দিবসের মূল প্রতিপাদ্যণ্ড ‘জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় তোমার পৃথিবী, তোমাকেই চায়’। খবর বিডিনিউজের। প্রধানমন্ত্রী বলেন, পানি ধারণ ক্ষমতা কমে যাওয়া এবং দখল হয়ে যাওয়ায় নদীগুলো প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। এগুলোকে আগের অবস'ায় ফিরিয়ে আনতে হবে। এটা বিশাল একটা প্রজেক্ট হবে, সময় লাগবে অনেক। কিন্তু এটা আমাদের করতেই হবে। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সংস'াগুলোর সহযোগিতা চেয়ে ভালো সাড়া পেয়েছি। সবগুলো নদী এ প্রজেক্টের আওতায় আনা হবে। যমুনা নদী দিয়ে কাজ শুরু হবে। যত টাকাই লাগুক আমাদের এটা করতেই হবে, মানুষকে বাঁচাতে হবে। নদী বাঁচাতে ড্রেজিং, নদী শাসন এবং ভাঙন রোধের ওপর জোর দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় বর্ষায় পানি এলে নদী ভরে যায়, বন্যা হয়। ড্রেজিং করতে পারলে বন্যা কম হতো। উষ্ণায়নের ফলে বাংলাদেশে যে ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে, ড্রেজিং করে নদীর গভীরতা বাড়াতে পারলে আমরা তা কমাতে পারব। শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ঘন ঘন বন্যা, জলোচ্ছ্বাস সহ নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে প্রতি বছর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের মানুষ। বিপর্যয়ের কারণে পরিবর্তিত পরিবেশ, হাইব্রিড ফসল আর জৈব সার নিয়ে নিবিড় গবেষণার আহ্বান জানালেন তিনি। দুর্যোগ মোকাবেলায় খাদ্যের মজুত বাড়ানোর কথাও বললেন প্রধানমন্ত্রী। খাদ্য সমস্যার বিষয়ে তিনি বলেন, বন্যা হবে, ঝড়-বৃষ্টি হবে, ফসলহানি হবেণ্ড এসব মানতেই হবে। তারপরও খাদ্যের অভাব যাতে না হয় তার ব্যবস্থা করতে হবে। ২-৩ বছরের খাদ্য মজুদ রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে একটা বছর ফসল নষ্ট হলেও কোনো সমস্যা না হয়। জনসংখ্যা বাড়বেই। এর সঙ্গে খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে। নতুন নতুন খাদ্যশস্য উৎপাদনে গবেষণার ওপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, “আশা করছি যে কোনো ধরনের পরিবেশে যাতে ফসল উৎপাদন করা যায় সে জন্য আমাদের বিজ্ঞানীরা গবেষণা করবেন। তবে যাই করা হবে তা যেন পরিবেশবান্ধব হয়। কীটনাশক ব্যবহার না করেই যাতে অধিক ফসল উৎপাদন করা যায় সে বিষয়ে গবেষণার আহ্বান জানান তিনি। পরিবেশ দূষণকারী কল কারখানাগুলোর প্রতি হুঁশিয়ার করে দিয়ে নগরায়নের ক্ষেত্রে পরিবেশগত দিক বিবেচনায় রাখার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। শিল্পায়নের ফলে ঢাকার আশপাশের নদী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রতিটি কলকারখানা পরিবেশবান্ধব করার চিন্তা করছি আমরা। এ বিষয় যারা মানবে না তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, “সবুজ বেষ্টনীর সৃষ্টি করতে হবে। সবুজ বেষ্টনী দিয়ে দেশকে সাজাতে পারলে পরিবেশ রক্ষা হবে। ঢাকাসহ দেশের অনেক এলাকায় পানির অভাব রয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। কিন্তু আমরা এ পানি ব্যবহার করতে পারি না। এ পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা করতে পারলে পানির অভাব কম হবে।” জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে প্রস্তুত থাকার জন্যও সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি। বিশ্ব পরিবেশ দিবসে এবারই প্রথম জাতীয় পরিবেশ পদক প্রদান করা হয়। একজন ব্যক্তি ও ৩টি প্রতিষ্ঠানকে পদক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এ বছর যে চারটি বিষয়ে পরিবেশ পদক দেওয়া হয় তা হলোণ্ড পরিবেশ সংরক্ষণ, পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ, পরিবেশ বিষয়ক গবেষণা ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং পরিবেশগত শিক্ষা ও প্রচারণা। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটি মূলত জনগণকে পরিবেশবান্ধব কাজ করতে সচেতন ও উৎসাহী করতেই করা হচ্ছে। এরপর প্রধানমন্ত্রী পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত দু’দিনব্যাপী পরিবেশ মেলার উদ্বোধন করেন। সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এতে অংশ নিচ্ছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন