তিন বোনের একটা মাত্র ভাই হৃদয়। নামের মতো সেও তাদের হৃদয় মণি-ই ছিল। মৃত্যুর ২৬ দিন পেরিয়ে গেছে, পুরো বাড়ি জুড়ে নিস্তব্ধতা রয়ে গেছে একই রকম। গতকাল জানাজানি হলো যে, তারই তিন সহপাঠী নির্মমভাবে তাকে হত্যা করে লাশ ভাসিয়ে দিয়েছিল সাগরে। এ সংবাদ শুনে হৃদয়ের পরিবারের সদস্যরা এখনো বিশ্বাস করতে পারছে না যে, ক্লাস এইটে পড়া কোন ছেলে যে, খুনী হতে পারে। তাই গতকাল পাহাড়তলী থানায় হৃদয়ের বাবা শাহজাহান তাঁর পুত্রের খুনী শুভ, পারভেজ ও ফরহাদকে বার বার জড়িয়ে ধরে বলছিলেন, ‘‘এদের বিরুদ্ধে আমি কী করবো এরাইতো আমার ছেলের মতোন। উল্লেখ্য, গত ১০মে হৃদয়ের এই তিন সহপাঠী সামান্য একটি এমপি সিক্স প্লেয়ারের জন্য খুন করে তাকে। গতকাল এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে গ্রেপ্তারকৃত তিন খুনী ভাবলেশহীনভাবেই খুনের লোমহর্ষক বিবরণ দেয়। পাহাড়তলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. কামরুল হাসান খুনের এ ঘটনাকে সামাজিক অবক্ষয় হিসেবে মনে করেন। তিনি বলেন, ক্যাবল টিভির কু প্রভাব কোমলমতি শিশুদের এভাবে ভয়ংকর অপরাধের দিকে ধাবিত করছে। ঘটনার বিবরণে জানা যায়, হৃদয়, শুভ, পারভেজ ও ফরহাদ আলহাজ্ব মোস্তফা হাকিম উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র। হৃদয়ের কাছে একটা এমপি সিক্স প্লেয়ার ছিল। ঘটনার ১৫ দিন আগে শুভ এটি চেয়ে নিয়েছিল হৃদয় থেকে। আবার ফিরিয়েও দিয়েছিল গত ৮মে। ৯মে হৃদয় ও তার জমজ বোন তন্বি স্কুলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে সকালে বাসা থেকে বের হয়। তন্বি স্কুলে ঢুকে গেলেও হৃদয় একটু পরে আসছি বলে স্কুল গেইট থেকে চলে যায়। স্কুল ছুটির পর হৃদয়কে দেখতে না পেয়ে তন্বি অপেক্ষা করে কিছুক্ষণ। পরে বাসায় চলে আসে। কিন্তু দুপুর গড়িয়ে বিকেল নামে, সন্ধ্যা আসে। তবুও হৃদয় আসে না। বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও তাকে না পেয়ে তার মা বাদী হয়ে পাহাড়তলী থানায় একটি জিডি করেন। পরদিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উত্তর কাট্টলীস্থ বেড়ী বাঁধ এলাকা থেকে হৃদয়ের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়। খুনের রহস্য উদঘাটন যেভাবে :- পাহাড়তলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামরুল হাসান ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনের দায়িত্ব দেন সাবইন্সপেক্টর বিপ্লবকে। ঘটনার অনুসন্ধান করতে গিয়ে তিনি আকাশ মন্ডল নামে হৃদয়ের এক সহপাঠীর খোঁজ পান। আকাশের সাথে গত ৭মে একটি মেমোরী কার্ড নিয়ে ঝগড়া হয়েছিল হৃদয়ের। পরে তাদের স্কুলের এক শিক্ষিকা বিষয়টি জেনে দু’জনকে ডেকে মিলিয়ে দেন। এস আই বিপ্লব আকাশের কাছে সেই ঝগড়া সম্পর্কে জানতে গেলে সে এ ধরনের কোন ঘটনার কথা অস্বীকার করে। এরপর সেই স্কুল শিক্ষিকাকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি মিমাংসা করে দেয়ার কথা স্বীকার করেন। শিক্ষিকার মুখোমুখি করা হয় এবার আকাশকে। এবার আর সে অস্বীকার করতে পারেনি। এসআই বিপ্লবের ধারণা হয়, খুনের ঘটনার সাথে কোন না কোন যোগসূত্র থাকতে পারে আকাশের। তাকে ভয় দেখানো হয়, হৃদয়ের খুনের মামলায় সেও জড়িয়ে যেতে পারে। এতে কাজ হয়। সে বলে, ‘‘সাগরে, হৃদয়ের লাশ পাওয়ার পরদিন একটি ছাদে আড্ডা দিচ্ছিল শুভ, পারভেজ ও ফরহাদ। কিছুক্ষণ পরে সে ছাদে যাওয়ার সময় সিঁড়িতে থাকতে শুনতে পায়, পারভেজ বলছে, আমরা কেউ ঘটনা সম্পর্কে কাউকে বলবো না।’ আরো দুই এক মিনিট অবস্থান করে আকাশ চলে আসে বলে জানায়। আকাশের এ তথ্যের পর এসআই বিপ্লবের ধারণা আরো বদ্ধমূল হয়। গত ৪মে বিশ্ব কলোনীস্থ জি ব্লকের ২১০ নং হোল্ডিং থেকে মোহাম্মদ আলমের ছেলে ফরহাদ (১৪), মোস্তফা হাকিম স্কুল সংলগ্ন বশির আহমদের বাড়ি থেকে এনামুল হকের ছেলে পারভেজ (১৪) এবং উত্তর কাট্টলীস্থ হাবিব উল্লাহর বিল্ডিং থেকে আশীষ চৌধুরীর ছেলে শুভ চৌধুরী (১৩)কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসা হয়। দুপুর থেকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়। কিস্তু কিছুতেই তারা মুখ খুলছে না। ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামরুল হাসান, তদন্ত কর্মকর্তা এস আই বিপ্লব নাছোড়বান্দা। রাত ৩টার দিকে শুভ প্রথম মুখ খোলে। খুলে বলে খুনের ঘটনা, কারণসহ সব কিছু। পারভেজ ও ফরহাদও স্বীকার করে, একটি এমপি সিক্স প্লেয়ারের জন্যই মূলতঃ খুন করা হয়েছে হৃদয়কে। বন্ধু ভেবেই হৃদয় ঘুরতে গিয়েছিল :- শুভ জানায়, স্কুল পালিয়ে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলেই কৌশলে হৃদয়কে বেড়ী বাঁধ এলাকায় নিয়ে যায়। পারভেজ এমপি সিক্সের প্রসঙ্গ তুলে সেটি শুভকে দিয়ে দিতে বলে। এছাড়া সে হৃদয়কে তার বাবার কাছ থেকে দুই লাখ টাকা এনে দিতে চাপ দেয়। সে বলে, এ টাকা দিয়ে একটি মুরগীর ফার্ম করা হবে। তারা চারজন পার্টনার হিসেবে থাকবে, স্বাবলম্বী হবে। হৃদয় তাদের প্রস্তাব দুটির একটিতেও সাড়া দেয়নি। শুরু হয় কথা কাটাকাটি। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে পারভেজ ও ফরহাদ সামনে-পেছনে হৃদয়ের গলা চেপে ধরে। এভাবে ১৫/২০ মিনিট পার হলে নিথর হয়ে পড়ে হৃদয়। তার লাশ সাগরে ছুঁড়ে ফেলা হয়। স্কুল ব্যাগটি মাটি চাপা দেয়া হয় সেখানেই। এমপি সিক্সটা শুভ নেয়। তাদের ধারণা ছিল লাশটা আর পাওয়া যাবে না। কিন্তু ভাটার টানে সেটি যে ফিরে আসবে তা ভাবেনি তারা। এ পর্যায়ে শুভ এ প্রতিবেদকে জানায়, খুনের দৃশ্য দেখে সে পালিয়ে যেতে দৌঁড় দেয়। কিন্তু অর্ধেক যেতে না যেতেই তাকে ধরে ফেলে পারভেজ ও ফরহাদ। তারা শাসায়, এ ঘটনা কাউকে জানালে হৃদয়ের মতো তোকেও মেরে ফেলা হবে। তাদের হাতে পায়ে ধরে ঘটনার কথা কাউকে জানাবে না জানিয়ে সে বাসায় চলে আসে। তবে এস আই বিপ্লব জানিয়েছেন, পুলিশী জিজ্ঞাসাবাদে শুভ স্বীকার করে যে, হৃদয়কে হত্যার সময় সে পা চেপে ধরেছিল। তাদের স্বীকারোক্তি মোতাবেক শুভর বাসা থেকে উদ্ধার করা হয় হৃদয়ের এমপি সিক্স প্লেয়ার। গতকাল তিনজনকে ঘটনাস্থলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাদের দেখানো মতে মাটি খুঁড়ে উদ্ধার করা হয় হৃদয়ের স্কুল ব্যাগ। হৃদয়ের পরিবারের মুখে কথা নেই :- হৃদয়ের বাবা মো. শাহজাহান দুবাই থাকেন। মা স্কুল শিক্ষিকা। তিন বোনের একজনের বিয়ে হয়ে গেছে। দ্বিতীয় জন অনার্স পড়ণ্ডয়া। সর্বশেষ তন্বি হৃদয়ের সাথেই পড়ে। হৃদয় ছিল তাদের চোখের মণি। তার বাবা জানায়, ‘‘এত ছোট বয়সেও বেশ গোছানো ছিল হৃদয়। ফোনে তার সাথে শেষ কথা হয়। সে বলেছিল, ‘‘আব্বু কেমন আছো তুমি? খাওয়া দাওয়া করছো তো ঠিকমতো?” এ কথা বলতে বলতে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, হৃদয় চলে যাওয়ার পর থেকে ফজরের নামাজের সময় ঘন্টা দুই ঘুমানো ছাড়া সারা রাত জেগে থাকি। তার মা ও জমজ তন্বিকে নিয়ে বেশি ভয়। তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, মেয়েরা হঠাৎ হঠাৎ ঘুমের ঘোরে চিৎকার করে জেগে উঠে। আমি কী করবো? তাদের কীভাবে শান্তনা দেবো? না পারছি সইতে, না পারছি কাঁদতে। আমার সাজানো সংসারটা তছনছ হয়ে গেছে। প্রয়োজন সামাজিক দায়বদ্ধতা :- পাহাড়তলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামরুল হাসান এ অবক্ষয় রোধে তিনটি বিষয়ের উপর জোর দেন। বাবা-মাকে সচেতন করতে হবে। স্কুলের শিক্ষকদের সচেতন হতে হবে। সামাজিকভাবে কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা করা যায়। তিনি বলেন, আমি আমার নিজের সন্তানকে নিয়ে ভাবছি। ক্যাবল চ্যানেল দেখে দেখে শিশুরা অন্ধভাবে অনুকরণ করছে সব কিছু। তাদের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে আমাদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে।
সহপাঠীরাই নির্মমভাবে খুন করেছে স্কুল ছাত্র হৃদয়কে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ৩ হত্যাকারীর স্বীকারোক্তি
তিন বোনের একটা মাত্র ভাই হৃদয়। নামের মতো সেও তাদের হৃদয় মণি-ই ছিল। মৃত্যুর ২৬ দিন পেরিয়ে গেছে, পুরো বাড়ি জুড়ে নিস্তব্ধতা রয়ে গেছে একই রকম। গতকাল জানাজানি হলো যে, তারই তিন সহপাঠী নির্মমভাবে তাকে হত্যা করে লাশ ভাসিয়ে দিয়েছিল সাগরে। এ সংবাদ শুনে হৃদয়ের পরিবারের সদস্যরা এখনো বিশ্বাস করতে পারছে না যে, ক্লাস এইটে পড়া কোন ছেলে যে, খুনী হতে পারে। তাই গতকাল পাহাড়তলী থানায় হৃদয়ের বাবা শাহজাহান তাঁর পুত্রের খুনী শুভ, পারভেজ ও ফরহাদকে বার বার জড়িয়ে ধরে বলছিলেন, ‘‘এদের বিরুদ্ধে আমি কী করবো এরাইতো আমার ছেলের মতোন। উল্লেখ্য, গত ১০মে হৃদয়ের এই তিন সহপাঠী সামান্য একটি এমপি সিক্স প্লেয়ারের জন্য খুন করে তাকে। গতকাল এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে গ্রেপ্তারকৃত তিন খুনী ভাবলেশহীনভাবেই খুনের লোমহর্ষক বিবরণ দেয়। পাহাড়তলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. কামরুল হাসান খুনের এ ঘটনাকে সামাজিক অবক্ষয় হিসেবে মনে করেন। তিনি বলেন, ক্যাবল টিভির কু প্রভাব কোমলমতি শিশুদের এভাবে ভয়ংকর অপরাধের দিকে ধাবিত করছে। ঘটনার বিবরণে জানা যায়, হৃদয়, শুভ, পারভেজ ও ফরহাদ আলহাজ্ব মোস্তফা হাকিম উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র। হৃদয়ের কাছে একটা এমপি সিক্স প্লেয়ার ছিল। ঘটনার ১৫ দিন আগে শুভ এটি চেয়ে নিয়েছিল হৃদয় থেকে। আবার ফিরিয়েও দিয়েছিল গত ৮মে। ৯মে হৃদয় ও তার জমজ বোন তন্বি স্কুলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে সকালে বাসা থেকে বের হয়। তন্বি স্কুলে ঢুকে গেলেও হৃদয় একটু পরে আসছি বলে স্কুল গেইট থেকে চলে যায়। স্কুল ছুটির পর হৃদয়কে দেখতে না পেয়ে তন্বি অপেক্ষা করে কিছুক্ষণ। পরে বাসায় চলে আসে। কিন্তু দুপুর গড়িয়ে বিকেল নামে, সন্ধ্যা আসে। তবুও হৃদয় আসে না। বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও তাকে না পেয়ে তার মা বাদী হয়ে পাহাড়তলী থানায় একটি জিডি করেন। পরদিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উত্তর কাট্টলীস্থ বেড়ী বাঁধ এলাকা থেকে হৃদয়ের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়। খুনের রহস্য উদঘাটন যেভাবে :- পাহাড়তলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামরুল হাসান ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনের দায়িত্ব দেন সাবইন্সপেক্টর বিপ্লবকে। ঘটনার অনুসন্ধান করতে গিয়ে তিনি আকাশ মন্ডল নামে হৃদয়ের এক সহপাঠীর খোঁজ পান। আকাশের সাথে গত ৭মে একটি মেমোরী কার্ড নিয়ে ঝগড়া হয়েছিল হৃদয়ের। পরে তাদের স্কুলের এক শিক্ষিকা বিষয়টি জেনে দু’জনকে ডেকে মিলিয়ে দেন। এস আই বিপ্লব আকাশের কাছে সেই ঝগড়া সম্পর্কে জানতে গেলে সে এ ধরনের কোন ঘটনার কথা অস্বীকার করে। এরপর সেই স্কুল শিক্ষিকাকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি মিমাংসা করে দেয়ার কথা স্বীকার করেন। শিক্ষিকার মুখোমুখি করা হয় এবার আকাশকে। এবার আর সে অস্বীকার করতে পারেনি। এসআই বিপ্লবের ধারণা হয়, খুনের ঘটনার সাথে কোন না কোন যোগসূত্র থাকতে পারে আকাশের। তাকে ভয় দেখানো হয়, হৃদয়ের খুনের মামলায় সেও জড়িয়ে যেতে পারে। এতে কাজ হয়। সে বলে, ‘‘সাগরে, হৃদয়ের লাশ পাওয়ার পরদিন একটি ছাদে আড্ডা দিচ্ছিল শুভ, পারভেজ ও ফরহাদ। কিছুক্ষণ পরে সে ছাদে যাওয়ার সময় সিঁড়িতে থাকতে শুনতে পায়, পারভেজ বলছে, আমরা কেউ ঘটনা সম্পর্কে কাউকে বলবো না।’ আরো দুই এক মিনিট অবস্থান করে আকাশ চলে আসে বলে জানায়। আকাশের এ তথ্যের পর এসআই বিপ্লবের ধারণা আরো বদ্ধমূল হয়। গত ৪মে বিশ্ব কলোনীস্থ জি ব্লকের ২১০ নং হোল্ডিং থেকে মোহাম্মদ আলমের ছেলে ফরহাদ (১৪), মোস্তফা হাকিম স্কুল সংলগ্ন বশির আহমদের বাড়ি থেকে এনামুল হকের ছেলে পারভেজ (১৪) এবং উত্তর কাট্টলীস্থ হাবিব উল্লাহর বিল্ডিং থেকে আশীষ চৌধুরীর ছেলে শুভ চৌধুরী (১৩)কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসা হয়। দুপুর থেকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়। কিস্তু কিছুতেই তারা মুখ খুলছে না। ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামরুল হাসান, তদন্ত কর্মকর্তা এস আই বিপ্লব নাছোড়বান্দা। রাত ৩টার দিকে শুভ প্রথম মুখ খোলে। খুলে বলে খুনের ঘটনা, কারণসহ সব কিছু। পারভেজ ও ফরহাদও স্বীকার করে, একটি এমপি সিক্স প্লেয়ারের জন্যই মূলতঃ খুন করা হয়েছে হৃদয়কে। বন্ধু ভেবেই হৃদয় ঘুরতে গিয়েছিল :- শুভ জানায়, স্কুল পালিয়ে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলেই কৌশলে হৃদয়কে বেড়ী বাঁধ এলাকায় নিয়ে যায়। পারভেজ এমপি সিক্সের প্রসঙ্গ তুলে সেটি শুভকে দিয়ে দিতে বলে। এছাড়া সে হৃদয়কে তার বাবার কাছ থেকে দুই লাখ টাকা এনে দিতে চাপ দেয়। সে বলে, এ টাকা দিয়ে একটি মুরগীর ফার্ম করা হবে। তারা চারজন পার্টনার হিসেবে থাকবে, স্বাবলম্বী হবে। হৃদয় তাদের প্রস্তাব দুটির একটিতেও সাড়া দেয়নি। শুরু হয় কথা কাটাকাটি। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে পারভেজ ও ফরহাদ সামনে-পেছনে হৃদয়ের গলা চেপে ধরে। এভাবে ১৫/২০ মিনিট পার হলে নিথর হয়ে পড়ে হৃদয়। তার লাশ সাগরে ছুঁড়ে ফেলা হয়। স্কুল ব্যাগটি মাটি চাপা দেয়া হয় সেখানেই। এমপি সিক্সটা শুভ নেয়। তাদের ধারণা ছিল লাশটা আর পাওয়া যাবে না। কিন্তু ভাটার টানে সেটি যে ফিরে আসবে তা ভাবেনি তারা। এ পর্যায়ে শুভ এ প্রতিবেদকে জানায়, খুনের দৃশ্য দেখে সে পালিয়ে যেতে দৌঁড় দেয়। কিন্তু অর্ধেক যেতে না যেতেই তাকে ধরে ফেলে পারভেজ ও ফরহাদ। তারা শাসায়, এ ঘটনা কাউকে জানালে হৃদয়ের মতো তোকেও মেরে ফেলা হবে। তাদের হাতে পায়ে ধরে ঘটনার কথা কাউকে জানাবে না জানিয়ে সে বাসায় চলে আসে। তবে এস আই বিপ্লব জানিয়েছেন, পুলিশী জিজ্ঞাসাবাদে শুভ স্বীকার করে যে, হৃদয়কে হত্যার সময় সে পা চেপে ধরেছিল। তাদের স্বীকারোক্তি মোতাবেক শুভর বাসা থেকে উদ্ধার করা হয় হৃদয়ের এমপি সিক্স প্লেয়ার। গতকাল তিনজনকে ঘটনাস্থলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাদের দেখানো মতে মাটি খুঁড়ে উদ্ধার করা হয় হৃদয়ের স্কুল ব্যাগ। হৃদয়ের পরিবারের মুখে কথা নেই :- হৃদয়ের বাবা মো. শাহজাহান দুবাই থাকেন। মা স্কুল শিক্ষিকা। তিন বোনের একজনের বিয়ে হয়ে গেছে। দ্বিতীয় জন অনার্স পড়ণ্ডয়া। সর্বশেষ তন্বি হৃদয়ের সাথেই পড়ে। হৃদয় ছিল তাদের চোখের মণি। তার বাবা জানায়, ‘‘এত ছোট বয়সেও বেশ গোছানো ছিল হৃদয়। ফোনে তার সাথে শেষ কথা হয়। সে বলেছিল, ‘‘আব্বু কেমন আছো তুমি? খাওয়া দাওয়া করছো তো ঠিকমতো?” এ কথা বলতে বলতে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, হৃদয় চলে যাওয়ার পর থেকে ফজরের নামাজের সময় ঘন্টা দুই ঘুমানো ছাড়া সারা রাত জেগে থাকি। তার মা ও জমজ তন্বিকে নিয়ে বেশি ভয়। তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, মেয়েরা হঠাৎ হঠাৎ ঘুমের ঘোরে চিৎকার করে জেগে উঠে। আমি কী করবো? তাদের কীভাবে শান্তনা দেবো? না পারছি সইতে, না পারছি কাঁদতে। আমার সাজানো সংসারটা তছনছ হয়ে গেছে। প্রয়োজন সামাজিক দায়বদ্ধতা :- পাহাড়তলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামরুল হাসান এ অবক্ষয় রোধে তিনটি বিষয়ের উপর জোর দেন। বাবা-মাকে সচেতন করতে হবে। স্কুলের শিক্ষকদের সচেতন হতে হবে। সামাজিকভাবে কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা করা যায়। তিনি বলেন, আমি আমার নিজের সন্তানকে নিয়ে ভাবছি। ক্যাবল চ্যানেল দেখে দেখে শিশুরা অন্ধভাবে অনুকরণ করছে সব কিছু। তাদের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে আমাদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে।
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন