আট দিনের রিমান্ডে দাউদ মার্চেন্ট ।। ‘পুলিশের এনকাউন্টারের ভয়ে ভারত থেকে পালিয়ে আসি’



মুম্বাইয়ের মাফিয়া ডন দাউদ ইব্রাহীমের ‘সহযোগী’ আব্দুর রউফ ওরফে দাউদ মার্চেন্ট ও তার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে সন্দেহে গ্রেপ্তার হওয়া অপর দু’জনকে আট দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।গতকাল গতকাল শনিবার বিকেল পৌনে চারটার দিকে মহানগর হাকিম সাইফুর রহমান সিদ্দিকের আদালতে তাদেরকে হাজির করা হয়। আদালত মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদনের পরিপ্রক্ষিতে এই তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। খবর বিডিনিউজের।
রিমান্ড আবেদনের শুনানির সময় দাউদ মার্চেন্ট ও অন্য দুজনের পক্ষে কোনো আইনজীবী আদালতে উপস্থিত ছিলেন না।রিমান্ড মঞ্জুর শেষে বিকেল ৩টা ৫৪ মিনিটে গোয়েন্দা পুলিশ একটি সাদা মাইক্রোবাসে করে তাদের নিয়ে চলে যায়।এর আগে দুপুরে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে তাদেরকে আনা হয় এবং কোর্ট হাজতে রাখা হয়।ওই আদালতের পুলিশের প্রসিকিউশন বিভাগের সহকারি কমিশনার আনিসুর রহমান ও পুলিশের জেনারেল রেকর্ডিং কার্যালয়ের উপ-পরিদর্শক আখের উজ জামান বলেন, দাউদ মার্চেন্ট এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে গ্রেপ্তারকৃত তার বাড়িওয়ালা কামাল মিয়া ও জাহিদ শেখের বিরুদ্ধে আদাবর থানায় পাসপোর্ট অ্যাক্ট ও ফরেনার’স অ্যাক্ট এ একটি মামলা হয়েছে।মঙ্গলবার গ্রেফতারের পর দাউদ মার্চেন্টকে নিয়ে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায় পুলিশ। দাউদকে গ্রেফতারের পর তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তার বাড়িওয়ালা কামাল মিয়া এবং মোহাম্মদপুরের শেখেরটেক থেকে জাহিদ শেখকে গ্রেফতার করা হয়। জাহিদ ভারতের নাগরিক বলে পুলিশের সন্দেহ। জাহিদের কাছ থেকে একটি পরিচয়পত্র ও শেখেরটেকের ওই ভাড়া বাসা থেকে মোবাইল ফোন সেট, একটি ড্রাইভিং লাইসেন্স ও ভারতীয় মোবাইল অপারেটর এয়ারটেলের দুটি সিম উদ্ধার করা হয়েছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মো. আশরাফ হোসেন রিমান্ড আবেদনে বলেন, “প্রথমোক্ত দু’জন (দাউদ মার্চেন্ট ও জাহিদ শেখ) নিজেদের ভারতীয় নাগরিকের পরিচয় গোপন করে বাংলাদেশী নাগরিক কামাল মিয়ার সহায়তায় বাংলাদেশে ভুয়া ঠিকানায় পাসপোর্ট তৈরি করেছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। দাউদ মার্চেন্ট ভারতীয় মাফিয়া ডন দাউদ ইব্রাহীম ও ছোট্টা শাকিলের সহযোগী।”ওই আবেদনে আরও বলা হয়, “ দাউদ মার্চেন্ট ভারতীয় সঙ্গীত পরিচালক গুলশান কুমার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত এবং ওই মামলায় সে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রাপ্ত। ওই মামলায় মহারাষ্ট্রের আওরঙ্গবাদ কারাগারে আট বছর চারমাস কারাভোগের পর এ বছরের এপ্রিলে ১৪ দিন প্যারোলে মুক্তি পায় দাউদ। ওই সময় সে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে।”দাউদ মার্চেন্ট বাংলাদেশে কোনো ধরনের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার পরিকল্পনা করছেন কিনা সে বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে রিমান্ডে নেওয়া প্রয়োজন বলে আবেদনে উল্লেখ করা হয়।গ্রেফতারের তিনদিন পর শনিবার আব্দুর রউফ ওরফে দাউদ মার্চেন্টকে গ্রেফতারের কথা স্বীকার করে বাংলাদেশ পুলিশ। তাকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ সংবাদ সম্মেলনও করে।
দাউদ মার্চেন্ট সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, এনকাউন্টারের ভয়ে তিনি ভারত থেকে পালিয়ে আসেন। গুলশান কুমার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তিনি জড়িত নন। শনিবার গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে আয়োজিত ওই সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার এএসএম শহীদুল হক বলেন, “দাউদ মার্চেন্টকে মঙ্গলবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদর থানার ঝুমুর হোটেলের সামনে থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রথমে তিনি নিজেকে ভারতীয় নাগরিক সমির শেখ বলে পরিচয় দেন। পরে জিজ্ঞাসাবাদে নিজের আসল পরিচয় স্বীকার করেন।”দাউদ মার্চেন্ট সাংবাদিকদের বলেন, “অসুস' মাকে দেখতে আমি প্যারোলে মুক্তি পাই। কিন' মুম্বাই পুলিশ আমাকে এনকাউন্টারে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে, এমন খবর পেয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসি।” ভারতীয় মিউজিক কোম্পানি টি-সিরিজের মালিক গুলশান কুমার হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত দাউদ মার্চেন্ট।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন