বাংলাদেশ রেলওয়ে, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, সড়ক ও জনপথ বিভাগসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থার প্রায় দশ হাজার কোটি টাকা দামের জায়গা ভূমিদস্যুদের দখলে আটকে আছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের কয়েকশ’ কোটি টাকার ভূমি বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত ভূমিগুলোর মধ্যে বেশ কিছু আবারো বেদখল হয়েছে। বন্দর কর্তৃপক্ষের মতো অভিযান চালাতে পারে নি অন্যান্য সংস্থা। এতে করে সরকারি অন্য সংস্থার মালিকাধীন শত শত কোটি টাকার ভূমি দিনে দিনে বেহাত হয়ে যাচ্ছে।
সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ রেলওয়ে এবং চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ হচ্ছে চট্টগ্রামের সবচেয়ে বেশি ভূ-সম্পত্তির মালিক। এক সময় দুইটি প্রতিষ্ঠান একই সংস্থার অধীনে থাকলেও পৃথক হয়ে যাওয়ার পর এদের ভূ-সম্পত্তিও পৃথক হয়েছে। বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের মালিকানায় বেশি ভূমি রয়েছে। এই দুইটি সরকারি সংস্থার বাইরে পানি উন্নয়ন বোর্ড, সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং বন বিভাগ বহু ভূসম্পত্তির মালিক। নিজেদের প্রয়োজন মিটানোর পরও বহু ভূমি এদের রয়েছে। বর্তমানে ব্যবহার না হলেও ভবিষ্যতে ব্যবহারের জন্য অনেক ভূমি সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে বন্দর কর্তৃপক্ষের বেশ কিছু ভূমি গত কবছরের মধ্যে নানা উন্নয়ন কর্মকান্ডের আওতায় নিয়ে আসা হলেও অন্যান্য সংস্থার সম্পত্তিগুলোর কোন উন্নয়ন কাজে লাগে নি। রেলওয়ের জমি আগের মতোই পড়ে আছে। এরমধ্যে বহু ভূমি ভাগ বাটোয়ারা হয়েছে। বৈধতার আড়ালে নানা অবৈধ কর্মকাণ্ড চলেছে। শত শত কোটি টাকার ভূসম্পত্তি নানা পন্থায় হজম করে নেয়া হয়েছে। বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নিকট নানা শর্তে ইজারা দেয়া হয়েছে হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি।বাংলাদেশ রেলওয়ের বহু সম্পত্তি সিএনজি স্টেশনসহ নানা প্রতিষ্ঠানের নিকট ইজারা দেয়া হয়। অনেক সময় কোন ধরনের আইন কানুনের তোয়াক্কা না করে ভূমি ইজারা দেয়া হয়েছে। ক্ষমতার জোরে সম্পত্তি ইজারা নেয়ার বহু ঘটনাও ঘটেছে। কেবল রেলওয়েরই নয়, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের মালিকানাধীন বিপুল পরিমাণ ভূমি বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নিকট ইজারা দেয়া হয়েছে। বন্দর সহায়ক শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার নিমিত্তে কেবল বিভিন্ন ব্যক্তিই নয় সরকারি এবং আধা সরকারি সংস্থার কাছে ভূুমি বরাদ্দ দেয়া হয়। বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নিকটও বন্দর কর্তৃপক্ষের বিপুল পরিমান ভূমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বছরের পর বছর ধরে এই সব ভূমি ইজারার নামে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে বরাদ্দ থাকলেও অনেকেই বন্দর সহায়ক প্রতিষ্ঠান না করে অন্য লাভজনক প্রতিষ্ঠান করেছে। বিশেষ করে মূল্যবান ভূমিগুলোতে নানা ধরনের বাণিজ্যিক অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে। চট্টগ্রামের বিভিন্ন ভূমিদস্যুরা প্রভাবশালী মহলের সহায়তায় দিনের পর দিন ভূমি দখল করে রেখেছে। ভূমি ইজারার নামে উক্ত ভূমি দখল করে রাখার বাইরে একেবারে অবৈধভাবেও বন্দরের কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি দখল করে রাখা হয়েছে। এক কাজের জন্য ভূমি বরাদ্দ নিয়ে অন্য কাজ করছে এমন ব্যক্তির তালিকায় প্রভাবশালী সাবেক মন্ত্রী, সাবেক এমপিও রয়েছেন। প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী এবং শিল্পপতিদের দখলে রয়েছে শত শত কোটি টাকার ভূমি। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সাবেক ম্যাজিষ্ট্রেট মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী অবৈধ দখলদারদের কবল থেকে শত শত কোটি টাকার সম্পত্তি উদ্ধার করলেও আইনের মারপ্যাঁচে পড়ে এখনো বিপুল পরিমান ভূমি অবৈধ দখলদারদের কবজায় রয়েছে।
ভূমি নিয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের অবস্থা শোচনীয়। বন্দর কর্তৃপক্ষ ম্যাজিষ্ট্রেট দিয়ে উচ্ছেদ অভিযান চালালেও রেলওয়ের ভূমি অনেকটা লাওয়ারিশভাবে বেদখল হয়ে রয়েছে। রেলওয়ের শত শত কোটি টাকার সম্পত্তি নিয়ে হরিলুট চলছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের কোটি কোটি টাকার সম্পত্তিরও কোন মা-বাপ নেই। বন বিভাগের ভূমির ক্ষেত্রেও চলছে একই ধরনের বেহাল অবস্থা। যে যেদিকে পেরেছে ভূমি দখল করে রেখেছে। ভূমিদস্যুদের দাপট ক্রমে বৃদ্ধি পাচ্ছে বলেও বিভিন্ন সূত্র মন্তব্য করেছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন