বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় গঠিত সরকারি তদন্ত কমিটি সরকারের বিবেচনা ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য আটটি স্বল্পমেয়াদী ও ১৫টি দীর্ঘ মেয়াদী সুপারিশ প্রস্তাব করেছে। সুপারিশগুলোর মধ্যে সেনা আইনে অনতিবিলম্বে পিলখানা ঘটনার বিচার কাজ সম্পন্ন করা এবং বিডিআর বিদ্রোহের মূল কুশীলবদের শনাক্তকরণে আরো তদন্তের ব্যবস্থা করার প্রস্তাব দিয়েছে কমিটি।
বিডিআর জওয়ানদের ক্ষোভ কাজে লাগিয়ে পিলখানা হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। এতে কোন জঙ্গি সম্পৃক্ততা নেই বলে মত দিয়েছে তদন্ত কমিটি।
গতকাল বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সরকার গঠিত এই তদন্ত কমিটির চেয়ারম্যান সাবেক সচিব আনিসুজ্জামান খান সাংবাদিকদের সামনে তদন্ত প্রতিবেদনের সার সংক্ষেপ তুলে ধরেন। এ সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ, বিডিআর মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মইনুল ইসলাম উপসি'ত ছিলেন।
রিপোর্টে বলা হয় বিদ্রোহের সময় বিডিআর সদস্যদের দমনে সেনা অভিযান চালালে দেশে গৃহযুদ্ধের মত পরিসি'তি সৃষ্টি হতে পারত। পিলখানা হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগে ২৪ জন বিডিআর কর্মকর্তা ও পরে ঘটনা প্রবাহে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টুসহ একাধিক ব্যক্তির নাম তদন্তে উল্লেখ করা হয়েছে।
গত ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি বিডিআর সদর দপ্তর পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় সরকার গঠিত ১২ সদস্যের তদন্ত কমিটির চেয়ারম্যান সাবেক সচিব আনিসুজ্জামান খান ৩০৯ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন। তদন্ত প্রতিবেদনে বিদ্রোহের ঘটনায় জঙ্গি সম্পৃক্ততা ও অন্য কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের ইন্ধনের তথ্য পাওয়া যায়নি বলে উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদনে বিদ্রোহের পটভূমি,বিদ্রোহে চলমান ঘটনাপ্রবাহ, বিদ্রোহের কারণ এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে। তদন্ত কমিটির চেয়ারম্যান বলেন, বিডিআর বাহিনীর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই সেনা নেতৃত্ব মেনে না নেয়ার মানসিকতা, ডালভাত কর্মসূচির অস্বচ্ছতা, সেনা কর্মকর্তাদের বিলাসবহুল জীবনযাপন ও বিডিআর জওয়ানদের অহেতুক শাস্তি দেয়ায় সাধারণ বিডিআর সদস্যদের মনে অসন্তোষের সৃষ্টি করে। তবে এসব বিষয় বিদ্রোহের মূল কারণ কিনা তা নিশ্চিতভাবে জানাতে পারেনি তদন্ত কমিটি।
আনিসুজ্জামান আরো বলেন, বিডিআর সদস্যদের এসব দাবি-দাওয়া সামনে রেখে কিছু ষড়যন্ত্রকারী দেশের সি'তিশীলতা নষ্ট করতে পিলখানার ঘটনা ঘটিয়েছে। সেই সাথে পিলখানা হত্যাযজ্ঞের পর সদস্যদের পালিয়ে যেতে স্থানীয় সন্ত্রাসী লেদার লিটন, বিএনপির ওয়ার্ড কমিশনার ও সাবেক এমপি নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টুসহ আরো কয়েকজন সহায়তা করেছে।
এদিকে তদন্ত রিপোর্টে বলা হয় বিডিআর জওয়ানরা ৯ম সংসদ নির্বাচনের পর তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নুর তাপস ও ফজলুল করিম সেলিমের সাথে সাক্ষাৎ করে ছিলেন। রিপোর্টে বলা হয়, রাজনৈতিকভাবে দাবি-দাওয়া পূরণে ব্যর্থ হয়ে বিডিআর জওয়ানরা নিজেরাই ২৪ ফেব্রুয়ারি রাতে বিদ্রোহের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে। সে অনুযায়ী ডিএডি তৌহিদ, জলিল, হাবিব ও মাসুদসহ কতিপয় সৈনিক ২৫ ফেব্রুয়ারি সকালে পিলখানায় সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা করে এবং লাশ গুমের চেষ্টা চালায়। বিডিআর বিদ্রোহে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা ও ৯ জন বিডিআর সদস্য নিহত হয়। তদন্ত প্রতিবেদনে ইলেট্রনিক মিডিয়ার ভূমিকা নিয়েও সমালোচনা করা হয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন