ফৌজদারহাট পর্যন্তই রিং রোড নির্মাণ করা হবে ।। সিডিএ’র আপত্তির মুখে নকশা পরিবর্তন করলো জাইকা



অবশেষে চট্টগ্রাম শহরের রিং রোডের নকশা আবারো পরিবর্তন করে ফৌজদারহাট পর্যন্ত রাস্তা এবং বেড়িবাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সিডিএ’র আপত্তির মুখে জাইকা নকশা পরিবর্তন করে সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার বাড়তি সড়ক এবং বেড়িবাঁধ নির্মাণের প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে। এতে করে পতেঙ্গা থেকে শুরু হওয়া রিং রোড সাগরিকা স্টেডিয়ামের পরিবর্তে ফৌজদারহাট টোল রোডের পাশ দিয়ে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাথে যুক্ত হবে। যা নির্মাণাধীন বায়েজিদ রোডে যুক্ত হয়ে চট্টগ্রামের সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। মাত্র ৮৪ কোটি টাকা বাড়তি খরচ করে সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার বাড়তি সড়ক নির্মাণ করা হবে।
সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম মহানগরীর চারপাশে একটি রিং রোড এবং শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের জন্য জাপানের আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা জাইকা’র সাথে বাংলাদেশ সরকার বেশ কিছুদিন আগে চুক্তি করে। চুক্তির অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে প্রথম পর্যায়ে পতেঙ্গা থেকে শুরু করে ফৌজদারহাট পর্যন্ত একটি চার লেনের রাস্তা এবং বিদ্যমান বেড়িবাঁধের চেয়ে দশ ফুট উঁচু বেড়িবাঁধ নির্মাণের প্রকল্প গ্রহন করা হয়েছিল। প্রকল্পটির শুরুতে ফৌজদারহাটের টোল রোড পর্যন্ত সড়ক নির্মাণের কথা বলা হলেও চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে বলা হয় যে এই সড়কটি হালিশহরের সাগরিকা স্টেডিয়ামের পাশ দিয়ে সাগরিকা রোডের সাথে যুক্ত হবে। ইতোমধ্যে প্রকল্পটি চূড়ান্ত করা হয়। সম্প্রতি গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রির সামনে প্রকল্পটি উপস'াপনও করা হয়। জাইকার পক্ষ থেকে প্রকল্পটি তৈরী করে উপস'াপন করা হলেও সীতাকুন্ড থেকে নির্বাচিত সাংসদ আলহাজ্ব এবিএম আবুল কাসেম এই প্রকল্পের বিরোধীতা করেন। সিডিএ’র পক্ষ থেকেও আপত্তি করা হয়। যাতে বলা হয় যে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা খরচ করে যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে তা খুব বেশি কাজে আসবে না। বিশেষ করে যানজট নিরসনের লক্ষ্য নিয়ে যে প্রকল্প তৈরী করা হচ্ছে তা নতুন করে যানজটের সৃষ্টি করবে। দৈনিক আজাদী এই সংক্রান্তে বিস্তারিত একটি সংবাদ প্রকাশ করে। ব্যাপারটি নিয়ে নগর বিশেষজ্ঞদের পক্ষ থেকেও মতামত ব্যক্ত করা হয়।
অবশেষে সিডিএ’র আপত্তির মুখে জাইকা নতুন করে প্রস্তাবনা তৈরী করছে। যাতে পতেঙ্গা থেকে শুরু হওয়া রাস্তাটি ফৌজদারহাটের টোল রোডের পাশ দিয়েই ঢাকা চট্টগ্রাম রোডে যুক্ত হবে। এজন্য ১৪.৭ কিলোমিটারের স'লে বাড়তি ৫.৫ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ করতে হবে। অপরদিকে বর্তমানে প্রকল্পটিতে তিনটি ফিডার রোড রাখা হয়েছে। এরমধ্যে একটি ইপিজেড এর পাশ দিয়ে শহরের সাথে যুক্ত থাকবে। অপরটি হালিশহর এলাকা দিয়ে যুক্ত হবে। দুই নম্বর এই ফিডার রোডে টোল রোডের উপর দিয়ে একটি ফ্লাইওভার রাখা হয়েছে। কিন' এরপাশেই একটি আন্ডারপাশ রয়েছে। এক্ষেত্রে ফ্লাইওভার না করে যদি বিদ্যমান আন্ডারপাস দিয়ে গাড়ি চলাচলের ব্যবস'া করা হয় তাহলে ২৩ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়। অপরদিকে সাগরিকা স্টেডিয়ামের পাশ দিয়ে ৩ নম্বর ফিডার নামের যে ফিডার রোডটি নির্মাণ করার প্রকল্প গ্রহন করা হয়েছে তাতে খরচ হবে ৭৮ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। সিডিএ বর্তমানে ফ্লাইওভার না করে ২৩ কোটি টাকা এবং তিন নম্বর ফিডার রোডটি না করে টোল রোডের সাথে রাস্তা লাগিয়ে দিয়ে প্রায় ৭৯ কোটি টাকা সাশ্রয় করার প্রস্তাব করেছে। এই দুইটি ফিডার রোড থেকে সাশ্রয় হওয়া ১০২ কোটি টাকার সাথে বাড়তি ৮৪ কোটি টাকা খরচ করে ১৪.৭ কিলোমিটারের রাস্তাটিকে আরো সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার বাড়িয়ে ফৌজদারহাটে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণে খরচ হবে ১৮৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। জাইকার রিং রোড নির্মাণের এই প্রকল্পে সর্বমোট দেড় হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে। এরমধ্যে নয়শ’ কোটি টাকা জাপান প্রদান করলেও বাংলাদেশ সরকারকে যোগান দিতে হবে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা। পতেঙ্গা থেকে শুরু করা রাস্তাটি ফৌজদারহাটের টোল রোড পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হলে এটি চট্টগ্রাম মহানগরীর সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসবে বলেও সূত্র জানিয়েছে।
জাইকার নকশা পরিবর্তন করে নতুন করে সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার বাড়তি সড়ক নির্মাণের প্রস্তাবনার ব্যাপারে গতকাল চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমরা নতুন করে প্রস্তাবনা তৈরী করেছি। বিষয়টি নিয়ে জাইকার সাথে কথা বলেছি। সবকিছু চূড়ান্ত করা হচ্ছে। মানুষ যেন উপকৃত হয়। নতুন এলাকা যেন উন্নয়নের ছোঁয়া পায় তা নিশ্চিত করতে প্রকল্পটিতে যেসব পরিবর্তন আনা দরকার তা আনা হবে বলেও সিডিএ চেয়ারম্যান মন্তব্য করেছেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন