চট্টগ্রাম পলিটেকনিকে ছাত্রলীগ-শিবির দফায় দফায় সংঘর্ষ : আহত ২০



ছাত্রলীগ ও ছাত্রশিবিরের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের পর চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেল তিনটা থেকে শুরু হওয়া এ সংঘর্ষের ঘটনায় দুই ছাত্র সংগঠনের অন্তত বিশজন কর্মী কমবেশি আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে প্রকাশ শিকদার নামে এক ছাত্রের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আহতদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করতে আজ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করবে কর্তৃপক্ষ। ঘটনার পর গতকাল রাতে শিবির কর্মীরা ষোলশহর, মুরাদপুর, নাসিরাবাদ ও এর আশপাশের এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে। মিছিলে কয়েকশ শিবির কর্মী অংশ নেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।
জানা গেছে, শিবির কর্মীরা বিকেল তিনটার দিকে সিরাজদ্দৌলা হোস্টেলে ‘বায়তুল মাল’ সংগ্রহ করার সময় ছাত্রলীগের কয়েক কর্মী তাতে বাধা দেয়। এতে দু পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি এবং ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় সংঘর্ষ শুরু হয়। পরে এই সংঘর্ষ পাশের নজরুল হোস্টেলে এবং পর্যায়ক্রমে পুরো ক্যাম্পাসেই ছড়িয়ে পড়ে। লাঠিসোটা ও ইটপাটকেল নিয়ে দু পক্ষ পরস্পরের প্রতি হামলা চালায়। প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে চলে সংঘর্ষ। উভয় পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লে ছাত্রশিবির অবস'ানগত কারণে কিছুটা সুবিধা পায়। সংঘর্ষের একপর্যায়ে ছাত্রশিবির কর্মীরা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থান নেয়। এ সময় তাদের হাতে লাঠিসোটাসহ অস্ত্রশস্ত্র দেখা যায়।
খবর পেয়ে পুলিশের কোতোয়ালী জোনের সহকারী (এসি) কমিশনার বাবুল আক্তার ঘটনাস'লে যান। এসি বাবুল জানান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিসি'তি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। পরিসি'তি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন রয়েছে বলে জানান তিনি।
সংঘর্ষের ঘটনায় ইনস্টিটিউট কর্তপক্ষ দু দিনের জন্য ক্লাস বন্ধ ঘোষণার পাশাপাশি অনির্দিষ্টকালের জন্য ছাত্রাবাস বন্ধ ঘোষণা করেছে। গতকাল রাত সাড়ে আটটার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হোস্টেল ছাড়তে বলা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ আব্দুল মালেক গতকাল রাতে দৈনিক আজাদীকে বলেন, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুটি ছাত্র সংগঠনের কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের কারণে ইনস্টিটিউটের ক্লাস দুদিনের জন্য বন্ধ করা হয়েছে। এছাড়া অনির্দিষ্টকালের জন্য হোস্টেল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, ইনস্টিটিউটের তিনটি হোস্টেল থেকে শিক্ষার্থীদের রাত সাড়ে আটটার মধ্যে চলে যেতে বলা হয়। ইতোমধ্যে অধিকাংশ শিক্ষার্থী হোস্টেল থেকে চলে গেছে। অধ্যক্ষ মালেক বলেন, সংঘর্ষের সময় হোস্টেলে এবং খাবার কক্ষে হামলা চালানো হয়েছে। এতে বেশ ক্ষতি সাধিত হয়েছে। তদন্ত কমিটি আজ ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করবে।
ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ জানায়, আগামী দু দিন ক্লাস বন্ধ থাকলেও পূর্বঘোষিত পরীক্ষাসমূহ যথারীতি অনর্ুষ্ঠিত হবে। নতুন করে সংঘর্ষ এড়াতে এবং পরিসি'তি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ক্যাম্পাসে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থী ও পুলিশ জানায়, আহত ছাত্রদের মধ্যে আটজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি প্রকাশের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তার মাথায় প্রচণ্ড আঘাত লেগেছে। আহতদের মধ্যে অপর কয়েকজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। এরা হলেন রিপন, জাহিদুল আলম, শিপন, দসুত, অসীম, সজীব, রুবেল, ইকবাল, বাবুল, জয়, মিজান ও সায়েম।
খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইফতেখার হাসান জানান, ইনস্টিটিউটের কাজী নজরুল এবং সিরাজদ্দৌলা হোস্টেলে ছাত্রলীগ ও ছাত্রশিবিরের কর্মীদের মধ্যে কথাকাটাকাটি ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার জের ধরে কয়েক দফা সংঘর্ষ হয়। উভয় সংগঠনের কর্মীরা ইটপাটকেল ও লাঠিসোটা নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।
বায়েজীদ বোস্তামী থানা যুবলীগের সহ-সভাপতি মাকসুদ চৌধুরী এ ঘটনার জন্য শিবিরকে দায়ী করে বলেন, তারা বিনা উস্কানিতে, বিনা কারণে ছাত্রলীগের নিরীহ কর্মীদের ওপর হামলা চালায়। তিনি ছাত্র নামধারী শিবির ক্যাডারদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
এদিকে সংঘর্ষের ঘটনায় ছাত্রলীগ ও ছাত্রশিবির পরস্পরকে দায়ী করেছে। হামলার ঘটনায় মহানগর ছাত্রলীগ আজ সকাল ১১টায় দারুল ফজল মার্কেটস্থ কার্যালয়ে প্রতিবাদ সভার আয়োজন করেছে। ছাত্রলীগ নেতা শিবপ্রসাদ দাশ শিবু গতকালের ওই ঘটনায় তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন। ছাত্রশিবির দাবি করেছে, ছাত্রাবাস দখল করার লক্ষ্যে ছাত্রলীগ পরিকল্পিতভাবে বহিরাগতদের নিয়ে নিরীহ ছাত্রদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালায়। এ ঘটনায় এক বিবৃতিতে চট্টগ্রাম মহানগর (উত্তর) ছাত্রশিবিরের সভাপতি মু. কলিম উল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান তীব্র নিন্দা জানান। তারা দোষীদের বিচার দাবি করে অবিলম্বে ছাত্রাবাস খুলে দেওয়ারও দাবি জানান।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন