ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়ন নিয়ে চারপাশে তোড়জোড় চললেও চট্টগ্রাম যেন আরো একধাপ এগিয়ে লিকুইড চট্টগ্রামে পরিণত হয়েছে। জোয়ার ভাটার সময় হিসাব করে ব্যবসা এবং শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি সাধারণ লোকজনকে চলাচল করতে হচ্ছে। জোয়ারের পানির কারণে কারখানার উৎপাদন বন্ধ রাখার মতো ঘটনাও এখানে ঘটছে। মাত্র আধাঘন্টার ভারি বর্ষণে নগরীর ব্যাপক এলাকা তলিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি জোয়ার ভাটার সময় হিসাব কষার নয়া এই জঞ্জাল ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।
স্থানীয় বিভিন্ন সূত্র এবং সরজমিনে অনুসন্ধান করে জানা গেছে, বাংলাদেশকে একটি ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য চারপাশে নানা ধরনের কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে। নয়া এই শ্লোগানের আগেই চট্টগ্রামকে একটি বিশ্বমানের নগরী হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখানো হয়। এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে অনেকেই বিভোর। ডিজিটাল থেকে আধুনিক টেকনোলজি হচ্ছে লিকুইড ক্রিস্টাল ডেফিনিশন (এলসিডি)। ফোন বর্তমানে উন্নত বিশ্ব লিকুইড টেকনোলজি আয়ত্ত্ব করে তাদের জীবন যাত্রায় আমুল পরিবর্তন এনেছে। যেমন টাচস্ক্রিন মোবাইল ফোন অবশ্য আরো লেটেস্ট টেকনোলজি হচ্ছে হাই-ডেফিনিশন (এইচ ডি) টেকনোলজি। এত উন্নত প্রযুক্তির স্বপ্ন না দেখে বাংলাদেশ ডিজিটালের স্বপ্নে বিভোর। এতে করে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন নিয়ে চারপাশে তোড়জোড় চললেও দেশের কথিত বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম বিভিন্ন সময় পানিতে তলিয়ে থাকে। ঘন্টা কয়েকের বৃষ্টিতে নগরীর ব্যাপক এলাকা তলিয়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার এখানকার অবকাঠামোগত উন্নয়নে বেশ কিছু প্রকল্প গ্রহণ করে। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. জিল্লুর রহমান পানিতে তলিয়ে যাওয়া একটি শহর কখনো বিশ্বমানের শহর হতে পারে না এবং বিশ্বমানের শহর ছাড়া বিশ্বমানের বন্দর হতে পারে না বলে মন্তব্য করেছিলেন। এই সময় বেশ কিছু অর্থও বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন কিছু কিছু প্রকল্পও গ্রহন করেছিল। কিন' চট্টগ্রাম মহানগরীর ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয়নি। কিছুক্ষনের বৃষ্টিতেই নগরীর একটি বিস্তৃত এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। বহু এলাকার নিচ তলা পরিত্যক্ত ঘোষিত হয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে এই সব বাসা বাড়িতে লোকজন বসবাস করতে পারলেও বর্ষাকালে নরক যন্ত্রনা ভোগ করে।
মাত্র আধাঘন্টার বৃষ্টিতে শহরের বিভিন্ন এলাকা তলিয়ে যাওয়ার যন্ত্রনার সাথে নতুন আপদ হিসেবে দেখা দিয়েছে জোয়ারের পানি। যথাযথভাবে স্লুইচ গেট না থাকার ফলে জোয়ারের পানি লোকালয়ে ঢুকে যায়। নগরীর বিভিন্ন এলাকা রাতে-দিনে দুইবার করে জোয়ারের পানিতে সয়লাব হয়ে যায়। জোয়ারের পানির কারণে কালুরঘাট শিল্পাঞ্চলের অসংখ্য শিল্প কারখানার মালিক এবং কর্মকর্তাদের অফিসে যাতায়ত করতে হচ্ছে জোয়ার ভাটার সময় হিসাব কষে। কালুরঘাট শিল্প এলাকার বিভিন্ন কারখানা পানির কারণে বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। ভিতরে হাঁটু পরিমাণ পানি ছিল। চাক্তাইর বহু ব্যবসায়ী এবং শিল্পপতিও জোয়ারের পানির কারণে অফিসে যাতায়ত করেন পানি আতংকের মধ্য দিয়ে। কারখানার শ্রমিক এবং দোকানের কর্মচারীরা নানাভাবে কষ্ট সহ্য করে কাজে যান। স'ানীয় লোকজন পানি ঠেলে ঠেলে নগরীতে বসবাস করেন। আগ্রাবাদ সিডিএ এবং হালিশহরের ব্যাপক এলাকা জোয়ারের পানিতে সয়লাব হয়। একবিংশ শতাব্দির এই দিনে চট্টগ্রাম মহানগরীর বহু মানুষকে জোয়ার ভাটার সময় দেখে জীবনযাপন করার বিষয়টি বিশ্বমানের নগরীর গড়া কিংবা ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নের ব্যাপারটি প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। অবশ্য গতকাল বেশ কয়েকজন শিল্পপতি এবং ব্যবসায়ী বিদু্রপ করে ব্যাপারটি, ডিজিটালের চেয়ে লেটেস্ট টেকনোলজি লিকুইড চট্টগ্রাম-এ বাস্তবায়ন হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন