‘আজ আমার একটিই উপলব্ধি-এদেশ ভালো মানুষের জন্য নয়’


সর্বনিম্ন দরদাতাকে কাজ দিয়ে সরকারের ১০০ কোটি টাকা সাশ্রয় করা হয়েছে ।। কন্টেনার টার্মিনাল সংক্রান্ত অভিযোগের জবাবে সাবেক উপদেষ্টা মতিন ।। ‘আজ আমার একটিই উপলব্ধি-এদেশ ভালো মানুষের জন্য নয়’


চট্টগ্রাম কন্টেনার টার্মিনাল পরিচালনায় উন্মুক্ত টেন্ডার প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ প্রদান করা হয়েছে। এতে করে সরকারের বিগত তিন বছরে প্রায় ১০০ কোটি টাকার সাশ্রয় হয়েছে বলে দাবি করেছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) এম এ মতিন। গতকাল চট্টগ্রামে এক মতবিনিময় সভায় সংবাদকর্মীদের সাথে তিনি এই কথা বলেন। তার বিরুদ্ধে উঠা দুর্নীতির অভিযোগ মিথ্যা ভিত্তিহীন উদ্দেশ্যমূলক আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরকে ওয়ান ইলেভেনের আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে এবং লুটপাটের রাজস্ব কায়েম করতে একটি স্বার্থান্বেষী চক্র উঠে পড়ে লেগেছে। এই চক্রটি বন্দরের সব অর্জন বানচাল করতে চাচ্ছে এবং এরাই আমাকে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সবচেয়ে প্রভাবশালী এই উপদেষ্টার বিরুদ্ধে সম্প্রতি নানা অভিযোগ উত্থাপিত হয়। এর প্রেক্ষিতে একটি সংসদীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা আগামী এক মাসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিদায়ের পর এই প্রথম কোন উপদেষ্টা তার বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগ সম্পর্কে সংবাদ সম্মেলন করলেন। উপদেষ্টা এম. এ. মতিন খুবই করুণ সুরে বলেন, আমার চাকরিজীবন এবং উপদেষ্টা থাকাকালীন সর্বত্রই নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেছি। কিন্তু জীবনের শেষ পর্যায়ে কেন জানি মনে হচ্ছে সব অর্জন হারাতে বসেছি। সার্বিক অবস্থার প্রেক্ষিতে আজ আমার একটিই উপলব্ধি- এদেশ ভালো মানুষের জন্য নয়। তিনি বলেন, সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, পিপিআর এর সকল নিয়মনীতি পুরোপুরি অনুসরণ করে উন্মুক্ত টেন্ডার প্রক্রিয়ায় সর্বনিম্ন দরদাতা নির্বাচিত হয়েছে এছাক ব্রাদার্স। তারপরও টেন্ডারের মধ্যে কিছু ত্রুটি থাকায় পর পর দুবার টেন্ডার আহ্বান করা হয় যাতেও এছাক ব্রাদার্স নির্বাচিত হয়। এরপরই টেন্ডার কমিটি তাকে কার্যাদেশ প্রদান করে। সম্প্রতি সংবাদপত্রে প্রকাশিত তাড়াহুড়ো করে অনভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠানকে কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ের কার্যাদেশ প্রদান করা হয়েছে শীর্ষক অভিযোগের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, টেন্ডার শর্তাবলী অনুযায়ী দরদাতার যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা মূল্যায়ন এবং রেসপনসিভ বা নন রেসপনসিভ করার দায়িত্ব মূলত এবং প্রধানত টেন্ডার কমিটির। টেন্ডার কমিটির মূল্যায়ন প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে প্রেরণের পর তার কার্যাদেশ দেয়া হয়। তড়িঘড়ি করে ফাইল স্বাক্ষর করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তড়িঘড়ি করে নয়, স্বাভাবিক পদ্ধতি অনুসরণ করেই পিপিআর এর সকল নিয়মনীতি মেনে, বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রস্তাব এবং মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে যথাযথভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষাপূর্বক কার্যাদেশ প্রদান করা হয়েছে। তিনি বলেন, বন্দরে বর্তমানে কর্মরত সাইফ পাওয়ার টেকেরও কোন অভিজ্ঞতা ছিল না। তাদের ফ্লিটে ছিল না কোন ভারি যন্ত্রপাতি। বন্দরের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে তারা কাজ চালিয়েছে। এছাক ব্রাদার্স অফডক পরিচালনাকারী শীর্ষস্থানীয় পুরনো প্রতিষ্ঠান। কার্যাদেশ প্রদানে তৎকালীন উপদেষ্টার প্রভাব খাটানোর অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অভিযোগটি সঠিক নয়। ৬ জানুয়ারি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ শেষ হচ্ছে জেনেও একজন উপদেষ্টার কোন অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত আদেশ মন্ত্রণালয়ের বা বন্দরের কোন কর্মকর্তা সজ্ঞানে সুবোধ বালকের মত তামিল করবেন ণ্ডতা কি সম্ভব? সাবেক এই উপদেষ্টা বন্দরের এইসব ঘটনা তদন্তে সংসদীয় কমিটি গঠনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, তারা ডাকলে আমি অবশ্যই যাব, তারা তদন্তে করে প্রকৃত ঘটনা উদ্‌ঘাটন করে দেশবাসীকে জানিয়ে দিক। নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকাকালীন বন্দর সংস্কারের নানা কার্যক্রম তুলে ধরে তিনি বলেন, সর্বক্ষেত্রে সততা, নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেছি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন