দশ ট্রাক অস্ত্র মামলা টিএফআই সেলে লিয়াকত


আলোচিত দশ ট্রাক অস্ত্র মামলায় টিএফআই সেলে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৬ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে গ্রেপ্তারকৃত মেজর (অব:) লিয়াকত হোসেনকে। গতকাল সোমবার বিকেলে মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুর রহমানের আদালতে তাকে উপস'াপন করে ১০ দিনের রিমান্ড প্রার্থনা করেন তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির এএসপি মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান চৌধুরী। জবাবে বিচারক অত্যন্ত সতর্কতার সাথে মেজর (অব:) লিয়াকতকে জিজ্ঞাসাবাদ করার নির্দেশ দিয়ে ৬ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এ সময় লিয়াকতের আইনজীবীরা তার জামিন ও রিমান্ড আবেদন বাতিলের দরখাস্ত দিয়ে বিচারকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। কিন্তু বিচারক তার জামিন নামঞ্জুর এবং রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন। এদিকে গ্রেপ্তারকৃত এনএসআই-এর পরিচালক (নিরাপত্তা) উইং কমান্ডার মোহাম্মদ শাহাবুদ্দীন আহমেদের জামিনও নাকচ করেছেন একই বিচারক। তার আইনজীবীদের করা এই আবেদনও একই সময় নাকচ হয়ে যায়। মামলা পরিচালনায় যথাযথ দিকনির্দেশনার স্বার্থে আইনজীবীরা শাহাবুদ্দীনের ১৬৪ ধারার স্বীকারোক্তিমূলক আদালতিক জবানবন্দীর কপি চাইলে বিচারক সেই আবেদন গ্রহণ করেন নি। এদিকে লিয়াকতকে রিমান্ডে নিয়ে যাওয়ার আবেদনে যুক্তি উপস্থাপন করতে গিয়ে মহানগর পিপি এডভোকেট কামাল উদ্দিন আহম্মদ আদালতকে বলেন, টিএফআইসেলের জিজ্ঞাসাবাদে শাহাবুদ্দিন ও আবদুর রহিম অস্ত্রের চোরাচালানের সাথে দেশি-বিদেশি সংস্থা, দূতাবাস ও ব্যক্তি জড়িত বলে উল্লেখ করেছিলেন। কিন' নিজেদের জড়িত থাকার কথা কৌশলে এড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন। একই কায়দায় ৪ দিনের পুলিশ রিমান্ডে লিয়াকতও নিজেকে বাঁচিয়ে তথ্য দিয়েছেন। সুতরাং তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে আসল তথ্য বের করা প্রয়োজন। এ সময় তিনি বিচারককে উদ্দেশ্য করে বলেন, আসামি লিয়াকতকে সম্পূর্ণ সুস' অবস্থায় আদালতে উপস'াপন করা হয়েছে। এই অস্ত্রের চালানের সাথে হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। দেশের অস্তিত্বের স্বার্থে এর রহস্য উদ্‌ঘাটন হওয়া দরকার। যারা দেশের সার্বভৌমত্বের পাহারাদার তারা (এনএসআই) যদি এ কাজ করে তা হলে মানুষ কোথায় নিরাপত্তা খুঁজবে? তিনি আরো বলেন, লিয়াকত একজন উপ-পরিচালক (টেকনিক্যাল) হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। এসব তার জানার কথা নয়। কিন' তিনি শাহাবুদ্দীনকে মোবাইলে অস্ত্র আটকের কথা বলেছিলেন তখন। শাহাবুদ্দীন তখন তৎকালীন ডিজির সাথে এ ব্যাপারে কথা বলার পরামর্শ দেন। অস্ত্রের চোরাচালানের পেছনের শক্তি কারা তা বের করতে লিয়াকতকে টিএফআই সেলে নিয়ে যাওয়া জরুরি। তিনি আগেকার তদন্তকে (জোট সরকারের) তথাকথিত তদন্ত উল্লেখ করে বলেন, এই মামলায় আগে যাদেরকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দেয়া হয়েছিল তারা ছিল সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। এই অস্ত্রের সাথে তৎকালীন রাষ্ট্রীয়যন্ত্র জড়িত ছিল। এসময় শুনানিতে অংশ নিয়ে লিয়াকতের আইনজীবী আবুল হাসান বলেন, মামলার গতি প্রকৃতি দেখে মনে হচ্ছে তদন্তের গন্তব্য একমাত্র আল্লাহ তায়ালাই জানেন। ২০০৪ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি আমার মক্কেলের চাকরি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয়। অথচ তাকে অস্ত্রের ঘটনায় এনএসআই-এর দায়িত্বরত কর্মকর্তা হিসেবে দেখানো হচ্ছে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, একজন ব্যক্তির একই সময় দুই মন্ত্রণালয়ের অধীনে দায়িত্ব পালন করা অযৌক্তিক। ওই সময় তিনি সিলেটে মাজার প্রাঙ্গণে বোমা হামলার ঘটনা তদন্ত করতে আসা স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের সাথে ব্যস্ত ছিলেন। অস্ত্রের সাথে তার কোন ধরনের সম্পৃক্ততার প্রশ্নই আসে না। এসময় তার আইনজীবী পুলিশ হাসপাতালের গত রোববারের রিপোর্ট উপস্থাপন করে বলেন লিয়াকত বোনমেরু সমস্যা, হাইপার টেনশন ও অ্যাজমায় ভুগছেন। এদিকে বিকেল ৩টা ১০ মিনিটে শুনানি শুরু হলে প্রথমে লিয়াকতের আইনজীবীকে ১৫ মিনিট তার সাথে কথা বলার সুযোগ করে দেন। আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়ানো লিয়াকত তার আইনজীবীর সাথে কথা বলতে গিয়ে নিজের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেন। এসময় তিনি বলেন, গত মঙ্গলবার আমাকে ঢাকায় সিআইডি অফিসে দীর্ঘ ৯ ঘণ্টা বসিয়ে রেখে গ্রেপ্তার করা হয়। অথচ আমিই ওনাদের নিজে ফোন করে বলেছিলাম এ ব্যাপারে যে কোন সহায়তা করব। প্রসঙ্গত, ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল সিইউএফএল ঘাট থেকে ১০ ট্রাক অস্ত্রের চালান আটক করা হয়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন