জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতে নতুন ইতিহাস ।। এসএসসির ফল প্রকাশ, চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে পাসের হার ৬৯.৬১ ।। মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪৫২৯ জন



জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতে এবার নতুন ইতিহাস গড়েছে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড। তবে পাসের শতকরা হারের ক্ষেত্রে ছন্দপতন হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১২ টায় চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের অধীনে সকল কেন্দ্রে একযোগে ফলাফল প্রকাশিত হয়। সারা দেশের শিক্ষাবোর্ডগুলোতে একযোগে এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ আবু তাহের স্বাক্ষরিত ফলাফলের কপি সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রগুলোতে সকালে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
এবারের ফলাফলের রেকর্ড সংখ্যক ৪ হাজার ৫শত ২৯ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। গতবার এ সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ৩শ ১৬ জন। চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে এবার পাসের হার ৬৯ দশমিক ৬১ শতাংশ। গত কয়েক বছরের পাসের ক্রমবর্ধমান শতকরা হারে এবার ছন্দপতন হয়েছে। গতবার এই হার ছিল ৭২ দশমিক ৬২ শতাংশ।
এদিকে ২০০৪ সালে পাসের হার ৪৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ থেকে ক্রমবর্ধমান হারে ২০০৫ সালে ৬০ দশমিক ৯২ শতাংশ, ২০০৬ সালে ৬৩ দশমিক ৮৭ শতাংশ ছিল। এবার পাসের শতকরা হারে ৩ দশমিক ১ শতাংশ কমলো। এবার জিপিএ-৫ এর সংখ্যা গতবারের তুলনায় বেড়েছে ২১৩ জন।
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় মোট ৬২ হাজার ১০৭ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ৪৩ হাজার ১৩২ জন। এদের মধ্যে ২২ হাজার ৫০ জন ছাত্র এবং ছাত্রী ২১ হাজার ৮২ জন। এক্ষেত্রে ছাত্রদের পাসের শতকরা হার ৭২ দশমিক ৪৮ শতাংশ এবং ছাত্রীদের পাসের শতকরা ৬৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ।
শিক্ষাবোর্ড সূত্র জানায়, মোট ৬২ হাজার ১০৭ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ৬১ হাজার ৯৬৪ জন।এবারে পরীক্ষায় ৩০ হাজার ৪২২ জন ছাত্র ও ৩১ হাজার ৫৪২ জন ছাত্রী অংশগ্রহণ করে।
চট্টগ্রাম বোর্ডে এবার বিজ্ঞান বিভাগে মোট ১৩ হাজার ৭১ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ১০ হাজার ৮৬৬ জন। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছাত্র ৭ হাজার ৬০৭ জন এবং ছাত্রীর সংখ্যা ৫ হাজার ৪৬৪ জন। পাস করা পরীক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্রের সংখ্যা ৬ হাজার ৩৭৫ এবং ছাত্রীর সংখ্যা ৪ হাজার ৪৯১ জন।
বিজ্ঞান বিভাগে ছাত্র পাসের হার ৮৩ দশমিক ৮০ শতাংশ ও ছাত্রীদের পাসের হার ৮২ দশমিক ১৯ শতাংশ। গতবারের তুলনায় এই বিভাগে পাসের হার কমেছে। এবার মোট পাসের হার ৮৩ দশমিক ১৩ শতাংশ হলেও গতবার এই হার ছিল ৮৫ দশমিক ৩৪ শতাংশ।
মানবিক বিভাগ থেকে অংশ নেয়া মোট ১১ হাজার ৮৩৮ পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ৬ হাজার ২৯৪ জন। এখানে পাসের হার ৫৩ দশমিক ১৭ শতাংশ। মোট পরীক্ষার্থীর মধ্যে মানবিক বিভাগে অংশ নেয়া ছাত্রদের সংখ্যা ৩ হাজার ১৭৭ এবং ছাত্রীদের সংখ্যা ৮ হাজার ৬৬১ জন। এর মধ্যে ছাত্র পাস করেছে ১ হাজার ৭২৪ এবং ছাত্রী পাস করেছে ৪ হাজার ৫৭০ জন। ছাত্রদের পাসের হার ৫৪ দশমিক ২৭ শতাংশ এবং ছাত্রীদের পাসের হার ৫২ দশমিক ৭৭ শতাংশ। ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে অংশ নেয়া মোট ৩৭ হাজার ৫৫ পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ২৫ হাজার ৯৭২ জন। এর মধ্যে ছাত্র ১৩ হাজার ৯৫১ এবং ছাত্রী ১২ হাজার ২১ জন। এই বিভাগে পাসের হার ৭০ দশমিক ৯ শতাংশ। ছাত্রদের পাসের হার ৭১ দশমিক ৪ শতাংশ এবং ছাত্রীদের পাসের হার ৬৯ দশমিক ২ শতাংশ। এই বিভাগে অংশগ্রহণকারী ছাত্রদের সংখ্যা ১৯ হাজার ৬৩৮ জন এবং ছাত্রীদের সংখ্যা ১৭ হাজার ৪১৭।
এদিকে বিজ্ঞান বিভাগের মতো মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে এবার পাসের হারের ছন্দপতন ঘটেছে। মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে এবার পাসের হার যথাক্রমে ৫৩ দশমিক ১৭ শতাংশও ৭০ দশমিক ৯ শতাংশ। গতবার পাসের হার ছিল যথাক্রমে ৫৮ দশমিক ৭০ শতাংশ ও ৭২ দশমিক ১৩ শতাংশ। প্রাপ্ত ফলাফলে জানা গেছে মোট জিপিএ-৫ পাওয়া ৪ হাজার ৫২৯ পরীক্ষার্থীর মধ্যে বিজ্ঞান থেকে পেয়েছে ৩ হাজার ৪০২ জন। মানবিক থেকে পেয়েছে ৪৪ জন এবং ব্যবসায় শিক্ষা থেকে পেয়েছে ১ হাজার ৮৩ জন।
এর মধ্যে ছাত্রদের সংখ্যা ২ হাজার ৪৯৯ এবং ছাত্রীদের সংখ্যা ২ হাজার ৩০ জন। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পাওয়া ছাত্রদের সংখ্যা ১ হাজার ৯৯৯ জন এবং ছাত্রীদের সংখ্যা ১ হাজার ৪০৩ জন। সবচেয়ে কম জিপিএ-৫ পাওয়া মানবিক বিভাগে ১৩ জন ছাত্র এবং ৩১ জন ছাত্রী।
ব্যবসায় শিক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া ছাত্রদের সংখ্যা ৪৮৭ এবং ছাত্রীদের সংখ্যা ৫৯৬ জন। মোট অংশগ্রহণকারী পরীক্ষার্থীর মধ্যে শতকরা ৭ দশমিক ৩১ শতাংশ পরীক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। জিপিএ-৪ থেকে ৫ পর্যন্ত পেয়েছে ১২ হাজার ৪ জন পরীক্ষার্থী। এর মধ্যে বিজ্ঞান থেকে ৪ হাজার ২০৩। মানবিক থেকে ৭৭৮ ও ব্যবসায় শিক্ষা থেকে ৭ হাজার ২৩ জন। এর মধ্যে মোট ৬ হাজার ২০১ ছাত্র এবং ৫ হাজার ৮০৩ জন ছাত্রী।
জিপিএ-৩ দশমিক ৫ থেকে ৪ পর্যন্ত পেয়েছে ৮ হাজার ৮৮৩। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পেয়েছে ১ হাজার ৭৩৭ জন। মানবিকে ১ হাজার ২১৯ জন এবং ব্যবসায় শিক্ষা থেকে পেয়েছে ৫ হাজার ৯২৭ জন। এদের মধ্যে ছাত্র ৪ হাজার ৬৪১ এবং ছাত্রী ৪ হাজার ২৪২ জন।
জিপিএ-৩ থেকে ৩ দশমিক ৫ পর্যন্ত পাওয়া মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৯ হাজার ৩৩৬ জন। বিজ্ঞান থেকে ১ হাজার ৭৫, মানবিক থেকে ১ হাজার ৮৭৪, ও ব্যবসায় শিক্ষা থেকে ৬ হাজার ৩৮৭ জন। এদের মধ্যে ছাত্র ৪ হাজার ৭১৬ ও ছাত্রী ৪ হাজার ৬২০ জন।
জিপিএ-২ থেকে ৩ পর্যন্ত পেয়েছে মোট ৮ হাজার ৬০ পরীক্ষার্থী। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ৪৪৬ জন। মানবিক থেকে ২ হাজার ২৫৭ ও ব্যবসায় শিক্ষা থেকে ৫ হাজার ৩৫৭ জন। এর মধ্যে ছাত্র ৩ হাজার ৮৬৪ ও ছাত্রী ৪ হাজার ১৯৬ জন।
জিপিএ-১ থেকে ২ পর্যন্ত পাওয়া ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৩২০ জন। বিজ্ঞান থেকে ৩ জন। মানবিক থেকে ১২২ জন এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে ১৯৫ জন। এদের মধ্যে ছাত্র রয়েছে ১২৯ ও ছাত্রী ১৯১ জন।
এদিকে শিক্ষাবোর্ড থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, এবার ছাত্রছাত্রী উভয়ের ক্ষেত্রে পাসের হার কমেছে। এই হার যথাক্রমে ৭২ দশমিক ৪৮ শতাংশ এবং ৬৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ। গতবার এক্ষেত্রে ছাত্রদের পাসের শতকরা হার ছিল ৭৪ দশমিক ৬২ শতাংশ এবং ছাত্রীদের পাসের হার ৭০ দশমিক ৬০ শতাংশ। চট্টগ্রাম মহানগরীতে এবার পাসের হার ৮২ দশমিক ৯২ শতাংশ এবং (জেলায় মহানগর বাদে) পাসের হার ৬৪ দশমিক ৯৬ শতাংশ।
মহানগরসহ জেলার পাসের হার ৭২ দশমিক ৩৪ শতাংশ।
কক্সবাজার জেলায় পাসের হার ৬৯ দশমিক ৫৬ শতাংশ, রাঙ্গামাটি জেলায় পাসের হার ৬২ দশমিক ৩৬ শতাংশ, খাগড়াছড়ি জেলায় পাসের হার ৪০ দশমিক ১৭ শতাংশ, বান্দরবান জেলায় পাসের হার ৫৫ দশমিক ৯০ শতাংশ।
পাসের হার শূন্য এধরনের স্কুলের সংখ্যা গতবার দুটি থাকলেও এবার কমেছে ১টি। গত ৩ বছরে এক নাগাড়ে হাসের হারে শূন্য প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা গতবার ১টি থাকলেও এবার তা নেই।
পরীক্ষার ফলাফল সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে চট্টগ্রাম বোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউসুফ দৈনিক আজাদীকে বলেন, ফলাফল আশানুরূপ হয়েছে। ছাত্র, শিক্ষক ও অভিভাবকদের সম্মিলিত প্রয়াসের ফল এটি। শিক্ষার যথাযথ মান নিশ্চিত করে সামনের দিনগুলোতে আমরা আরো ভালো ফলাফলের প্রত্যাশায় রইলাম। প্রসঙ্গত চট্টগ্রাম বোর্ডে ৯০৬ বিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থীরা ১১৩টি কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে।
এবার ২৩ জন পরীক্ষার্থীর ফলাফল স'গিত রাখা হয়েছে। বোর্ড কর্তৃপক্ষ জানায়, ফলাফলে কোনো ভুলত্রুটি পরিলক্ষিত হলে তা ফলাফল প্রকাশের দিন হতে পরবর্তী ৩০দিনের মধ্যে বোর্ড কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন