পিন্টু পাঁচ দিনের রিমান্ডে

ঢাকার পিলখানায় বিডিআর সদর দপ্তরে বিদ্রোহের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া সাবেক বিএনপির সংসদ সদস্য নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টুর পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডির কর্মকর্তারা গতকাল বুধবার দুপুর ১টায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতের কাছে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করলে তুমুল হট্টগোলের মধ্যদিয়ে আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। আদালতের এ আদেশের পরপরই সাবেক এই সাংসদকে সিআইডি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এর আগে জামিনের শুনানির সময় আইনজীবীদের মধ্যে হট্টগোল বেঁধে যাওয়ায় আদালত ১০ মিনিটের জন্য মুলতবি ঘোষণা করা হয়। আবার আদালত বসলে পিন্টু নিজেই জামিনের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। কিন্তু আদালত শুনানি শেষে পৌনে ২টায় তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে পাঁচ দিনের রিমান্ডের আদেশ দেয়। ২টায় তাকে আদালত ভবন থেকে কড়া নিরাপত্তায় নিয়ে যাওয়া হয়। খবর এনএনবির। এর আগে মঙ্গলবার তাকে হাইকোর্ট মাজার গেট থেকে গ্রেফতারের পর গতকাল বুধবার সকালে মহানগর হাকিম মমিনুল হাসানের কোর্টে হাজির করে রিমান্ড আবেদন করে সিআইডি কর্মকর্তারা। পিন্টুকে বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অবৈধভাবে ফাঁসানোর জন্য আটক করা হয়েছেণ্ড এ দাবি করে তার আইনজীবীরা পিন্টুর জামিনের আবেদন করেন। আইনজীবীরা বলেন, নৃশংস হত্যাকাণ্ডে বিএনপিকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে জড়ানোর জন্য পিন্টুকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অথচ মির্জা আজম, ব্যারিস্টার ফজলে নুর তাপসসহ সরকারের এমপি, মন্ত্রী যারা পিলখানার ঘটনার সময় প্রবেশ করেছিলেন তাদের গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি। ওই হত্যাকাণ্ডে সরকারি প্রতিবেদনে পিন্টুর নাম থাকায় তিনি হাইকোর্টে রিট আবেদন করতে গিয়েছিলেন যেন এ মামলায় তাকে হয়রানি করা না হয়। রিট আবেদনটি শুনানির অপেক্ষায় ছিল। আইনের আশ্রয় নিতে গিয়ে পিন্টু হাইকোর্ট থেকে গ্রেপ্তার হয়েছেন। শুনানিতে তারা বলেন, এ মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা কাহার আকন্দ অবসরে গিয়েছিলেন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর সাথে তার সুসম্পর্ক থাকার কারণে এ মামলায় তাকে দিয়ে সাজানো তদন্ত অনুষ্ঠান চালানো হচ্ছে। যারা পিলখানা মামলায় ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিলেন তাদের জবানবন্দিতে পিন্টুর নাম প্রকাশ হয় নি। আর রিমান্ড আবেদনে ১৬৪ ধারায় পিন্টুর নাম এসেছে কিনা তা বলা হয় নি। সাবেক সচিব আনিস-উজ-জামান খানকে প্রধান করে পিলখানা হত্যাকাণ্ড তদন্তে সরকার গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্টে বলা হয়েছে ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারির বিডিআর বিদ্রোহে জড়িত জওয়ানদের পালিয়ে যেতে সহায়তা করেন পিন্টু। এ অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হতে পারে এটি আঁচ করতে পেরে পিন্টু গ্রেফতার ও হয়রানি এড়াতে আগাম নির্দেশনার জন্য রোববার এ বিষয়ে নির্দেশনা চেয়ে বিচারপতি তারিকুল হাকিম ও বিচারপতি মো. আজিজুল হকের সম্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন করেন। পিলখানার ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদনে নাম আসায় গ্রেফতার ও হয়রানি না করার নির্দেশ চেয়ে তিনি ওই রিট আবেদন করেছিলেন। মঙ্গলবার এ আবেদনের শুনানির পর হাইকোর্ট পিন্টুর আবেদন গ্রহণে অস্বীকৃতি জানায়। এরপর পিন্টু আইনজীবীদের গাউন পরে একটি মোটরসাইকেলে চড়ে হাইকোর্ট প্রাঙ্গণ ত্যাগ করার চেষ্টা করলে সাদা পোশাকধারী গোয়েন্দারা তাকে ধাওয়া করে আটক করে। ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় বিডিআর সদর দপ্তরে বিদ্রোহের ঘটনায় ২৮ ফেব্রুয়ারি লালবাগ থানায় মামলা করা হয়। পরবর্তী সময়ে মামলাটি নিউ মার্কেট থানায় স্থানান্তরিত হয়। রিমান্ড আবেদনে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সিআইডির সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আবদুল কাহার আখন্দ পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পিন্টুর বিরুদ্ধে বিদ্রোহে মদদ দান, বিদ্রোহীদের সমর্থনে মিছিল বের করতে উৎসাহ দান এবং বিদ্রোহী জওয়ানদের পালিয়ে যেতে সহায়তা করেন বলে উল্লেখ করেন। ওই আবেদনে আরো বলা হয়, পিলখানায় বিদ্রোহ ঘটনায় সদর দপ্তরে বিভিন্ন বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, মালামাল লুণ্ঠন, সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের হত্যা, তাদের গণকবর দেয়া, অনেকের লাশ স্যুয়ারেজ লাইনে ফেলে দেয়ার ঘটনায় বিদ্রোহীদের ইন্ধন জুগিয়েছেন পিন্টু। ওই কাজে পিন্টুর সহযোগীদের চিহ্নিত করাসহ ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের জন্য পিন্টুকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। এ সময় আদালতে পিন্টুর রিমান্ড বাতিল চেয়ে তার জামিনের আবেদন জানান পিন্টুর পক্ষের আইনজীবীরা। এ শুনানিতে অংশ নেন এডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, খোরশেদ আলম, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, গোলাম মোস্তফা খান, মোসলেহ উদ্দিন জসীম, লতিফ তালুকদার, জয়নাল আবেদীন মেসবাহসহ অপর আইনজীবী আদালতে রিমান্ড আবেদনের বিরোধিতা করেন। শুনানিকালে মাসুদ আহমেদ তালুকদারের সাথে খোরশেদ আলমের বাকবিতণ্ডা, গালিগালাজ এবং এক পর্যায়ে হাতাহাতির উপক্রম হলে দুপুর ১টা ৩৫ মিনিটে বিচারক শুনানি গ্রহণ শেষ না করেই আদালত মুলতবি ঘোষণা করেন। শুনানির শেষ পর্যায়ে পিন্টু কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে কিছু বলার জন্য আদালতের কাছে অনুমতি চেয়ে বলেন, মঙ্গলবার বিকালে হাইকোর্ট থেকে আমাকে বেআইনিভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এনেছে তা মোটেই সত্য নয়। হাজারীবাগ থেকে সোয়ারিঘাট গিয়ে আমি কিভাবে নৌকা ঠিক করলাম বিডিআর বিদ্রোহীদের পালানোর জন্য। ঘটনার সময় ৫ নম্বর গেটের বাইরে মিছিলের ভিডিও ফুটেজে আমার বা আমার দলীয় কর্মীর ছবি দেখাতে পারলে আমি যে কোন সাজা মাথা পেতে নেবো। তিনি বলেন, আমি মারাতুক অসুস্থ। দেশের স্কয়ার হাসপাতাল এবং পরে বিদেশে মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলাম। ডিবি অফিসে কনস্টেবলের হাতে পায়ে ধরেও একটি ওষুধ আনতে পারি নি। গ্যাস্ট্রিক-আলসারের ব্যথায় সারারাত কাতরিয়েছি। কিন্তু আদালত শুনানি শেষে পৌনে ২টায় তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে পাঁচ দিনের রিমান্ডের আদেশ দেয়। ২টায় তাকে আদালত ভবন থেকে কড়া নিরাপত্তায় নিয়ে যাওয়া হয়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন