আড়াই শতাধিক চোরের সর্দার তাজুলের কাছ থেকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রিক চোরের উপগ্রুপ, চোরাই পণ্য কেনার নির্দিষ্ট পার্টি এবং মধ্যস'াকারীদের সম্পর্কে চমকপ্রদ তথ্য পেয়েছে পুলিশ। কোতোয়ালী থানায় রিমান্ডে এসে পুলিশী জিজ্ঞাসাবাদে তাজুল এসব তথ্য দেয় তদন্ত কর্মকর্তা সাবইন্সপেক্টর মোহসীন জানিয়েছেন। ২ জুন মঙ্গলবার এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালেও সে জানায়, ‘আমারে একবার সুযোগ দিতে স্যারেরে কইছি। এবার জেল থেকে বাইর অওনের পর যদি আমারে এ লাইনে দেহে তাইলে ক্ররস্ফায়ার দিতে কইছি। ‘উল্লেখ্য, গত ২৮ মে টানা ৬৪ ঘণ্টার অভিযান চালিয়ে এসি কোতোয়ালী বাবুল আক্তার ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মহিউদ্দিন মাহমুদের নেতৃত্বে কোতোয়ালী থানার একটি বিশেষ অভিযান দল চোর সর্দার তাজুল এবং তার ১১ জন সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে। গত ১ জুন তাকে ১ দিনের রিমান্ডে আনা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তাজুল জানিয়েছে, সুবিধে মতো যেকোন দোকান তারা চুরি করলেও, তার প্রথম পছন্দ ওষুদের দোকান। কারণ, ওজন কম, সময় সাশ্রয় হয় এবং অল্প মালে অধিক মুনাফা। কোন্ সিরাপ, ইনজেকশন কিংবা স্যালাইন নয়, নেয়া হয় ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল জাতীয় ওষুধ। সে জানায়, লেহাপড়া জানি না ঠিকই তয় কোন্ কোম্পানির কী মাল বেশি চলে, হে সম্পর্কে কাম করতে করতে ধারণা হইয়া গেছে। চোরাই মাল জমা হয় হোটেল আল আকসার ৩২ ও ৩৩ নম্বর রুমে। গত সাত মাস ধরে অধিকাংশ বারই এ দুটি রুম তার জন্য নির্দিষ্ট ছিল। মাল কেনার তথাকথিত পার্টি নিয়ে আসে পাথরঘাটা, সিনেমা প্যালেস ও স্টেশন রোড এলাকার কিছু যুবক। চোরাই ওষুধ সবচেয়ে বেশি কিনতো পাথর ঘাটা পুরান গীর্জ্জা এলাকার একটি ফার্মেসি। এ ছাড়া হাজারী গলির তিনটি ওষুধের দোকানও ছিল তার ‘পার্মানেন্ট কাস্টমার।’ মাঝে মধ্যে কার্টন ভর্তি করে চেয়ারকোচে ঢাকায় পাঠানো হয়। তাজুলের অনুশোচনা কিংবা অপরাধ বোধ নেই বিন্দুমাত্র, পুলিশ কর্মকর্তারাও এ জন্য বিস্মিত! তার দুঃখ শুধু একটাই; নারায়ণগঞ্জে তার এলাকার মানুষ কিংবা তার পরিচিত জনেরা জানে না যে, সে চুরি পেশায় জড়িত। এলাকাবাসীর কাছে তার পরিচয় একজন দিলখোলা ব্যবসায়ী হিসেবে। তার বন্ধু কিংবা পরিচিত জনেরা জানে তার ব্ল্যাকের ব্যবসা আছে। এ প্রতিবেদককেও সে বারবার অনুরোধ করেছে, তাকে নিয়ে আর লেখালেখি না করতে। সে বলে, ‘ভাই, আমার এ জীবনে কোনদিন গরীবরে ঠকাই নাই আমি। পয়সাঅলারে খাইছি, নিরীহ মাইনষেরে খাওয়াইছি। মাইনষের দোয়া আছে আমার লগে। নইলে যে পাপ করছি, মাইর আরো বেশি খাইতাম।’ গত ৭ মাস আগে তাজুল ও তার ট্রাকের হেলপার লিটন লোহাগাড়া থানায় ধরা পড়েছিল বলে স্বীকার করেছে। সে জানায়, চুরি করতেই ট্রাক নিয়ে সে ও তার সহযোগীরা লোহাগাড়া গিয়েছিল। ফিরে আসার সময় জনতা ও পুলিশ ধাওয়া করে তাদের। সকলে পালালেও ধরা পড়ে যায় তাজু ও হেলপার লিটন। সে মামলায় দেড় মাস জেল খেটে জামিনে বেরিয়ে আসে দু’জন। তাজুলের দৃঢ় বিশ্বাস, মাস/দেড় মাসের বেশি এবারো তাকে জেল খানায় কাটাতে হবে না। ঠিকই জামিন পেয়ে যাবে। ধরা পড়ার দিন থেকে রিমান্ডে আসা পর্যন্ত তার এ বিশ্বাসে চিড় ধরে নি এতটুকু। এ প্রসঙ্গে এস আই মোহসিন বলেন, তাজুলের মনোবল অত্যন্ত শক্ত। কাকে কোন্ টনিক দিলে কাজ হবে, সেটা বুঝে সে কাজ চালিয়ে আসছিল এতদিন ধরে। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে আমরা চট্টগ্রাম ভিত্তিক তাজুলের গ্রুপ মেম্বারদের ধরার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। অচিরেই আরো একটা সুসংবাদ আশা করি নগরবাসীকে দিতে পারবো।
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন