ভিটামিন এ ক্যাপসুল খেয়ে শত শত শিশু অসুস্থ : রাজবাড়িতে ১ জনের মৃত্যু ।। আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ সরকারের

শনিবার সারাদেশে শিশুদের ভিটামিন এ ক্যাপসুল ও কৃমিনাশক ট্যাবলেট খাওয়ানোর পর বিভিন্ন জেলায় বহু শিশু অসুস' হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন সংবাদ সংস্থার খবরে অসুস্থ শিশুর সংখ্যা শত শত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে রাজবাড়িতে এক শিশুর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। শিশুদের অসুস্থ হওয়ার খবরে অনেক স্থানেই আতংক ছড়িয়ে পড়ে। এদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় শিশুদের অসুস্থ হওয়ার খবরে আতংকিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।
এ পর্যন্ত ফরিদপুর, সিরাজগঞ্জ, ঝিনাইদহ, চাঁদপুর, মাদারীপুর, কক্সবাজার, নাটোর, সুনামগঞ্জ, গোপালগঞ্জ ও নড়াইল প্রায় দুশ’ শিশুর অসুস' হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। গতকাল রোববার বিকালে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হকের বরাত দিয়ে মন্ত্রণালয়ের এক বক্তব্যে বলা হয়েছে, সার্বিক পরিসি'তি বিবেচনা করে মনে হয়েছে শিশুদের অসুস'তা কেবল ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবেই ঘটেনি। এর সঙ্গে অপুষ্টি, অত্যধিক গরম ও পরিবেশগত অন্যান্য কারণও জড়িত।ওষুধের মান ও মেয়াদ নিয়ে কোনও প্রশ্ন বা সংশয় নেই বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়। বিষয়টি সতর্কভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে। খবর বিডিনিউজ ও ফোকাস বাংলার।গতকাল রোববার দুপুরে জাতীয় পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক অধ্যাপক পারভীন ফাতেমা চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। কৃমির ওষুধ খেলে বমি বা পাতলা পায়খানা হতে পারে।ফাতেমা পারভীন জানান, পেটে অতিরিক্ত কৃমি থাকলে ওষুধ খাওয়ার পর বমি বা পাতলা পায়খানা হতে পারে।শনিবার সারাদেশে ২ কোটি শিশুকে ভিটামিন এ ক্যাপসুল ও ১ কোটি ৯০ লাখ শিশুকে কৃমির ওষুধ খাওয়ানোর কর্মসূচি পালন করা হয়। জাতীয় পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন, কৃমির ওষুধ খেয়েই শিশুরা বমি ও পাতলা পায়খানা করছে। শনিবার ইউনিসেফের সরবরাহ করা কৃমির ওষুধ ‘এলবেনডাজল’ খাওয়ানো হয়। দেশীয় প্রতিষ্ঠান ইনসেপ্টা এলবেনডাজল এর উৎপাদক। অন্যদিকে ভিটামিন এ ক্যাপসুল সরবরাহ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক অধ্যাপক পারভীন চৌধুরী জানান, ইনসেপ্টার সরবরাহ করা ওই এলবেনডাজল এর মেয়াদ আছে ২০১০ সালের মে মাস পর্যন্ত।তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন জেলার সিভিল সার্জন ও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। অনেকেই ভয় পেয়ে শিশুকে পরীক্ষা করতে আনছে।ভিটামিন এ ক্যাপসুল ও কৃমিনাশক ট্যাবলেট খেয়ে রাজবাড়ীতে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। অসুস'তার সংখ্যাও ক্রমেই বাড়ছে। গত ২ দিনে অন্তত ৩ শতাধিক শিশু অসুস্থ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে এখনও শতাধিক শিশু ভর্তি রয়েছে। পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে রবিবার স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক বরাবর একটি প্রতিবেদন পাঠান হয়েছে।
এদিকে, সকালে জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার বাহিরচর দৌলতদিয়ায় হাবিব নামে ৮ বছরের এক শিশু মারা গেছে। তার পিতার নাম নিজাম ফকীর। ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইনে বয়সসীমা না মেনে কৃমিনাশক ট্যাবলেট খাওয়ানোর পর থেকেই সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হলেও রবিবার নিজ বাড়িতে সে মারা যায়।এদিকে ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাপসুল ও কৃমিনাশক ট্যাবলেট নিয়ে আতংকিত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী। তিনি বলেন, ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ার পর শিশুদের পাতলা পায়খানা হতে পারে। এটি মারাত্মক কিছু নয়। এ ক্যাপসুল খেয়ে শিশু মৃত্যুর নজির বিশ্বের কোথাও নেই। গতকাল রোববার বিকেলে গোপালগঞ্জ সার্কিট হাউসে জেলার স্বাস্ত্য ও পরিবার কল্যাণ, সমাজ সেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় উপদেষ্টা এ কথা বলেন।স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ বিষয়ক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সৈয়দ মোদাচ্ছের বলেন, প্রচারণার অভাবে ফরিদপুরসহ দেশের বিভিন্নস্থানে এ ক্যাপসুল খেয়ে শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এ ব্যর্থতার দায় আমাদের। প্রচারণার গাফিলতির বিষয়টি তদন্ত হচ্ছে। দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন