শেষ মুহূর্তে জবানবন্দি দিতে লেয়াকতের অস্বীকৃতি ভেস্তে গেল সিআইডির উদ্যোগ ।। দশ ট্রাক অস্ত্র মামলা


ঢাকায় টিএফআই সেলে জিজ্ঞাসাবাদকালে ১৬৪ ধারায় আদালতিক জবানবন্দি দিতে রাজি হয়েছিলেন মেজর (অব.) লেয়াকত হোসেন। ৬ দিনের রিমান্ড শেষে টিএফআই সেল থেকে এ উপলক্ষে গত পরশু রোববার তাকে চট্টগ্রামে নিয়ে আসে সিআইডি। গতকাল সোমবার বেলা ১২টায় তাকে মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ওসমান গণির আদালতে নেয়া হয়। নিয়ম অনুযায়ী বিচারক এনএসআই’র সাবেক এই উপ-পরিচালককে (টেকনিক্যাল) জবানবন্দি নেয়ার আগে তিন ঘণ্টা সময়ও দেন। দশ ট্রাক অস্ত্র মামলার আলোচিত এই আসামিকে মনসি'র করার জন্য দেয়া এই তিন ঘণ্টা সময়ের মধ্যেও জবানবন্দি দিতে রাজি লেয়াকত। সবকিছু ঠিকঠাক। বিকেল ৩টায় ওসমান গণির খাস কামরায় ঢুকলেন লেয়াকত। জবানবন্দি দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু। বিচারক ১৬৪-এ জবানবন্দি নেয়ার বিধিবদ্ধ ফরমে উদ্ধৃত প্রশ্নের আলোকে লেয়াকতকে বললেন, আপনার নাম লেয়াকত হোসেন। আপনি দশ ট্রাক অস্ত্র মামলার আসামি আপনাকে গত ২৬ মে গ্রেফতার করা হয়েছে। আপনাকে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। এসব কথার উত্তরে লেয়াকত হ্যাঁ সূচক উত্তর দেন। এর পরের প্রশ্নগুলো ছিলণ্ড আমি পুলিশ নই আমি বিচারক জানেন নাকি। লেয়াকতের উত্তর হ্যাঁ। এরপর বিধিবদ্ধ ফরমের আওতায় বিচারক লেয়াকতকে উদ্দেশ্য করে বলেন, রিমান্ডে আপনাকে নির্যাতন করা হয়েছে কিনা। করলে আমাকে স্পটগুলো দেখাতে পারেন। এ সময় লেয়াকত নির্যাতনের শিকার হন নি বলে বিচারককে জানান। এই পর্যন্ত সবকিছু ঠিকঠাক। উপরের প্রশ্নোত্তরগুলোয় ১৫ মিনিট সময়ও অতিবাহিত হয়। কিন্তু “আপনি ১৬৪ ধারায় নিজের দোষ স্বীকারমূলক জবানবন্দি দিবেন কিনা” বিচারকের এই প্রশ্নেই বেঁকে বসেন লেয়াকত। অথচ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি হওয়াতেই তাকে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে উপস্থাপন করে সিআইডি। আদালত সূত্র জানায়, বিধিবদ্ধ ফরমের ৬ নম্বর কলামের ৫ নম্বর অনুচ্ছেদ এর একটি প্রশ্নের জবানবন্দি দিতে অস্বীকার করেন লেয়াকত। এই ঘটনায় লেয়াকতকে নিয়ে সিআইডির প্রচেষ্টা প্রথম দফায় ভেস্তে গেল বলে মন্তব্য করেছেন আইন বিশেষজ্ঞরা। এদিকে মামলার অপর আসামি মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরীর জামিন আবেদন নাকচ করেছেন মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট ফজলুল বারী। গতকাল সোমবার তার আইনজীবীরা জামিনের আবেদন জানান। প্রসঙ্গত, রেজ্জাকুল হায়দারকেও ৬ দিনের রিমান্ডে ঢাকায় টিএফআই সেলে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গতকাল আদালতে উপস্থাপন করা হয়। এদিকে আদালত থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, লেয়াকত জবানবন্দি দিতে অস্বীকার করায় তাকে জবানবন্দি না নিয়ে ফেরত পাঠানো হয়। জবানবন্দি ফরমে যে প্রশ্নোত্তরগুলো লিপিবদ্ধ করা হয়েছে সেগুলো হুবহু রেকর্ডে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে। সর্বশেষ লেয়াকতকে আদালত থেকে কারাগারে ফিরিয়ে নেয়া হয় বিকেল সাড়ে ৩টায়। এ ব্যাপারে তার আইনজীবী আবুল হাসান বলেন, তিনি ঘটনার ব্যাপারে কিছু জানেন না। তিনি অসুস্থ। এ কারণে জবানবন্দি দেন নি। এ ব্যাপারে তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান চৌধুরী, লেয়াকত রাজি ছিলেন বলেই এই পর্যন্ত আনা হয়েছে। জবানবন্দি না দেয়াটা সম্পূর্ণ তার ব্যাপার। প্রসঙ্গত, উল্লেখিত দুইজনকে গত পরশু রোববার টিএফআই সেলে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে চট্টগ্রামে আনা হয়। এর আগে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের (টিএফআই) জন্য ৬ দিনের রিমান্ডে নেয় সিআইডি পুলিশ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন