কর্ণফুলী কন্টেনার টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প লালফিতায় বন্দী

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের কর্ণফুলী কন্টেনার টার্মিনাল (কেসিটি) নির্মাণের প্রকল্প যথারীতি লালফিতার কবলে পড়েছে। বিদ্যমান তিনটি জেটিকে ভেঙে প্রায় সাড়ে আটশ’কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন করে একটি কন্টেনার টার্মিনাল নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলেও কার্যত কিছু হয় নি। বছরে সাড়ে তিন লাখ টিইইউএস কন্টেনার হ্যান্ডলিং করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে এই টার্মিনালটি নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। লালফিতার কবলে পড়ায় কবে নাগাদ প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখবে তা নিয়ে সংশয় ব্যক্ত করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেনার হ্যান্ডলিং এর পরিমাণ প্রতিদিনই বাড়ছে। গত বছর চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি রপ্তানি পণ্য বোঝাই ১০ লাখ ২৭ হাজার ৭৪৫ টিইইউএস কন্টেনার হ্যান্ডলিং করা হয়। আগামী ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে এই সংখ্যা বিশ লাখ টিইইউএস ছেড়ে যাবে। প্রতিবেশি দেশকে ট্রানজিট দেয়ার যে প্রস্তাবনা রয়েছে তা কার্যকর হলে কন্টেনার হ্যান্ডলিং এর পরিমাণ আরো অনেক বেশি বৃদ্ধি পাবে। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে দুইটি বিশেষায়িত কন্টেনার টার্মিনাল রয়েছে। এরমধ্যে চিটাগাং কন্টেনার টার্মিনালে (সিসিটি) ৪৫০ মিটার দীর্ঘ জেটিসহ পশ্চাদসুবিধা রয়েছে। সিসিটিতে একই সাথে তিনটি কন্টেনার জাহাজ বার্থিং দেয়া যায়। এই টার্মিনালে বছরে তিন লাখ টিইইউএস কন্টেনার হ্যান্ডলিং করা যায়। অপরদিকে ১০০০ মিটার দীর্ঘ জেটিসহ পশ্চাদসুবিধার নিউমুরিং কন্টেনার টার্মিনালও বন্দরের কন্টেনার হ্যান্ডলিং এর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এই টার্মিনালে একই সাথে পাঁচটি জাহাজ বার্থিং দেয়ার সুবিধা রয়েছে। এই টার্মিনালে বছরে ৫ লাখ টিইইউএস কন্টেনার হ্যান্ডলিং এর সুবিধা রয়েছে। দুইটি বিশেষায়িত কন্টেনার টার্মিনালে ৮ লাখ টিইইউএস কন্টেনার হ্যান্ডলিং এর পাশাপাশি বন্দরের কয়েকটি সাধারণ জেটিতেও কন্টেনার হ্যান্ডলিং করা হয়। কন্টেনার হ্যান্ডলিং এর জন্য বিশেষায়িত জেটিগুলোতে হ্যান্ডলিং চালানোর পাশাপাশি বাড়তি চাপ সামাল দিতে বন্দর কর্তৃপক্ষ সাধারণ জাহাজ ভিড়ানোর উপযোগী করে নির্মিত ১১, ১২ এবং ১৩ নম্বর জেটিতেও কন্টেনার হ্যান্ডলিং করে আসছে গত কয়েক বছর ধরে। তবে ১৯৫৪ সালে নির্মিত জেটিগুলোতে কন্টেনার হ্যান্ডলিং এর বিল্ডইন সুবিধা না থাকায় বন্দর কর্তৃপক্ষকে নানা ধরনের সমস্যা মোকাবেলা করতে হয়। বিশেষ করে দীর্ঘ ৫৫ বছরের পুরানো জেটিগুলোর অবস'াও অনেকটা নাজুক। এই অবস'ায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ১১, ১২ এবং ১৩ নম্বর জেটি ভেঙে কর্ণফুলী কন্টেনার টার্মিনাল (কেসিটি) নামের অত্যাধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত একটি কন্টেনার টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করে। এই টার্মিনালে ৬০০ মিটার দীর্ঘ জেটিতে একই সাথে তিনটি মাদার ভ্যাসেলের বার্থিং সুবিধা থাকবে। ৪৫ একর পশ্চাদসুবিধা সম্বলিত এই কন্টেনার টার্মিনালে বছরে সাড়ে তিন লাখ টিইইউএস কন্টেনার হ্যান্ডলিং করা যাবে। প্রকল্পটির সর্বমোট ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৮২০ কোটি টাকা। কনসালটেন্ট নিয়োগ থেকে শুরু করে প্রকল্পটির কাজ শেষ করতে তিন বছর সময় লাগবে। ইতোমধ্যে প্রকল্প সারপত্র তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য জমা দেয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। উল্লেখ্য, বন্দর কর্তৃপক্ষের তহবিলে প্রায় ২৭শ’ কোটি টাকা জমা রয়েছে। প্রকল্পটির ডিপিপি (ড্রাফট প্রজেক্ট প্রোফাইল) মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিনেও মন্ত্রণালয়ের কোন সাড়া মিলেনি। বন্দর কর্তৃপক্ষের নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ানাধীন প্রকল্পটির ব্যাপারে কবে নাগাদ অনুমোদন মিলবে তাও বলতে পারছে না কেউ। লালফিতার কবলে পড়া প্রকল্পটির ব্যয় প্রতিদিনই বাড়বে। ৮২০ কোটি টাকা ব্যয় নির্ধারণ করে যে প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে আগামী এক বছর পরে সেই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে কমপক্ষে এক হাজার কোটি টাকা লাগবে। তখন প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য আবারো মন্ত্রণালয়ের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে। কেসিটি প্রকল্পের ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের উদাসীনতায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বন্দর ব্যবহারকারীদের অনেকেই। তারা বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর নিজস্ব টাকা খরচ করে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করলেও এখন পর্যন্ত একটি প্রকল্পও লালফিতার দৌরাত্ম্যমুক্ত হয়ে বাস্তবায়িত হয়নি। নিউমুরিং কন্টেনার টার্মিনাল বাস্তবায়নেও বছরের পর বছর ঘুরতে হয়। ক্যাপিটাল ড্রেজিং প্রকল্পও ঝুলে আছে। এখন কেসিটিও ঝুলে গেল।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন