গোয়েন্দা পুলিশ ভারতীয় শীর্ষ সন্ত্রাসী আব্দুল রউফ দাউদ মার্চেন্টকে বুধবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। মাফিয়া ডন দাউদ ইব্রাহীমের সহযোগী আব্দুল রউফ দাউদ মার্চেন্ট মোহাম্মদপুরে জাহিদ নামে আরেক ভারতীয় নাগরিকের সঙ্গে বাসা ভাড়া নেন। বাংলাদেশী পাসপোর্টও যোগাড় করে সে। তার মোবাইলের কল লিস্টে পাকিস্তান ও দুবাইয়ে কথা বলার রেকর্ড মিলেছে।
বিখ্যাত ভারতীয় মিউজিক কোম্পানি টি-সিরিজের মালিক গুলশান কুমার হত্যা মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত আবদুর রউফ ওরফে দাউদ মার্চেন্টকে মামলায় তাকে দশ বছরের কারাদণ্ড দেয় মুম্বাইয়ের একটি আদালত। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল মঙ্গলবার রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পুলিশের সহায়তায় শহরের মৌড়াইল মহল্লার কামাল মিয়ার বাড়ি থেকে তাকে আটক করে। খবর ইউএনবি ও বিডিনিউজের।
আবদুর রউফ ওরফে দাউদ মার্চেন্টের সঙ্গে কুখ্যাত মাফিয়া ডন দাউদ ইব্রাহীমের ‘যোগাযোগ’ রয়েছে বলে পুলিশ তার মোবাইল কল লিস্ট পরীক্ষা করে ধারণা করছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশকে উদ্ধৃত করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপারিনটেনডেন্ট মুখলেছুর রহমান গতকাল বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের জানান, দাউদ মার্চেন্ট সম্প্রতি আখাউড়া সীমান্ত দিয়ে গোপনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে এসে বসবাস শুরু করে। এরই মধ্যে বাংলাদেশি পাসপোর্টও তৈরি করে ফেলেছে সে।
গোপনে সংবাদ পেয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি বিশেষ দল মঙ্গলবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আসে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা জেলা পুলিশের সহায়তায় শহরের মৌড়াইল এলাকার একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে দাউদ মার্চেন্টকে গ্রেপ্তার করে। তাকে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে বাড়ির মালিক কামাল মিয়াকেও গ্রেপ্তার করা হয়।
মুখলেছুর রহমান জানান, আটকের পরপরই দাউদ মার্চেন্টকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদ এবং মোবাইল ফোনের কললিস্ট পরীক্ষা করে পুলিশ ধারণা করছে তার সঙ্গে মাফিয়া ডন দাউদ ইব্রাহীমসহ আরো অনেক ‘কুখ্যাত’ ব্যাক্তির যোগাযোগ রয়েছে।
দাউদ মার্চেন্টকে আশ্রয় দেওয়া বাড়ির মালিক কামালের স্ত্রী ফেরদৌসী জানান, ৩/৪ দিন আগে দাউদ মার্চেন্ট তাদের বাসায় ওঠে। নিজেকে মোজাহিদ নামে পরিচয় দিয়ে সে ঢাকায় গাড়ির যন্ত্রাংশের ব্যবসা করে বলে জানায়। ফেরদৌসী জানান, আখাউড়ার জনৈক বিল্লাল মিয়ার মাধ্যমে তার স্বামী কামালের সঙ্গে মোজাহিদের পরিচয় হয়। মার্চেন্টের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সম্পর্কে তারা কিছুই জানতেন না।
এদিকে ঢাকা মহানগর পুুলিশ এবং গোয়েন্দা পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা দাউদ মার্চেন্টকে গ্রেপ্তার করার ব্যাপারে কোন মন্তব্য করেননি। তবে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সহকারী কমিশনার (এসি) খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ১৯৯৭ সালের ১২ আগস্ট খুন হন গুলশান কুমার। সঙ্গীত পরিচালক নাদিম সাইফি তাকে হত্যা করার জন্য আবু সালেমকে ভাড়া করে। অবশেষে আবু সালেমের সহযোগী দাউদ মার্চেন্ট তাকে হত্যা করে। হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই পলাতক রয়েছে নাদিম সাইফি।
নাদিম সাইফি বিখ্যাত সঙ্গীত পরিচালক যুগল নাদিম-শ্রাবণ এর একজন। আবু সালেম দাউদ ইব্রাহিমের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত। গুলশান কুমার হত্যা মামলায় ২০০১ সালে দাউদ মার্চেন্টকে দশ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ভারতীয় আইন অনুযায়ী, গত মাসে স্বজনদের সঙ্গে দেখা করার জন্য তাকে এক পক্ষের (১৫ দিন) জন্য সাময়িক মুক্তি দেওয়া হয়।
এরপর থেকে মার্চেন্ট মুম্বা থানায় নিয়মিত হাজিরা দিত। কিন' এক সপ্তাহ পরই থানায় রিপোর্ট করা বন্ধ করে দেয় দাউদ মার্চেন্ট।
কে এই দাউদ মার্চেন্ট
দাউদ মার্চেন্ট আব্দুর রউফ নামে পরিচিত। মুম্বাইয়ের অপরাধ জগৎ নিয়ন্ত্রণকারী দাউদ ইব্রাহিমের পরিবারে তার জন্ম। বেড়ে ওঠার পর থেকেই তিনি অপরাধ জগতের সাথে পরিচিত হন। মুম্বাইয়ের বস্তি থেকে শুরু করে চলচ্চিত্র পুরোটাই নিয়ন্ত্রণ করতো দাউদ পরিবার। এর সঙ্গে যুক্ত হন মুম্বাইয়ের অপরাধ জগতের দুই ডন আবু সালেম আর ছোটা শাকিল। শাকিলের নেটওয়ার্ক ভারতের দিল্লী, মুম্বাই, কলকাতা, ব্যাঙ্গালোর, নেপালের কাঠমান্ডু, বাংলাদেশের ঢাকা, পাকিস্তানের করাচি আর মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশেও রয়েছে।
অডিও ব্যবসায়ী গুলশান কুমার হত্যার ঘটনায় দাউদ মার্চেন্টের নাম অপরাধ জগতে প্রকাশ হয়ে পড়ে। ২০০১ সালের ৮ জানুয়ারি কলকাতায় ছোটা শাকিলের ঘাঁটি থেকে পুলিশ দাউদ মার্চেন্টকে গ্রেপ্তার করে। জিজ্ঞাসাবাদে দাউদ মার্চেন্ট সঙ্গীত পরিচালক গুলশান কুমার হত্যার পুরো ঘটনা স্বীকার করেন। প্রকাশ ভারতের হিন্দু উগ্রবাদী শিব সেনা ব্যাল থ্যাকারের সংগঠন আরএসএস’কে বিলিয়নিয়ার গুলশান কুমার আর্থিকভাবে সহযোগিতা করতেন। তাই দাউদ ইব্রাহিম তখন গুলশান কুমারকে খুন করার পরিকল্পনা নেয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন